প্রবল চাপে ডানা মেললেন নাসুম

বুধবার আবুধাবির পার্ক রোটানা হোটেলে নিরাপত্তারক্ষীরা সাংবাদিকদের ক্যামেরা ভেতরে চালাতে দিচ্ছিলেন না। সাংবাদিকরা তখন ভাবছিলেন কী করবেন, ঠিক তখনই হাতের বুড়ো আঙুলে ব্যান্ডেজ বেঁধে বাইরে রাস্তায় হাজির হলেন নাসুম আহমেদ। আফগানিস্তানে বিপক্ষে যিনি রক্ষাকর্তা বাঁচিয়েছেন বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দ্বারা প্রভাবিত হন, নাসুমও এর ব্যতিক্রম না। এশিয়া কাপের ঠিক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনায় ভীষণভাবে বিচলিত করেছিল। একপাক্ষিক মন্তব্যে যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে যেন ট্রায়াল শুরু হয়, তখন তিনি কাছের মানুষদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেও প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে নীরবতাকেই বেছে নেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছে তিনি নিজেকে ডুবিয়ে দেন অনুশীলনে। ভালো করেই জানতেন, শুরু থেকেই একাদশে সুযোগ পাবেন না, তবে যখনই সুযোগ আসবে তখন প্রাণপণ লড়াই করতে হবে—কারণ ব্যর্থ হলে সমালোচনা ফের টেনে আনবে ব্যক্তিগত জীবন।
মঙ্গলবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে এবারের এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচে মাঠে নামেন তিনি, কাঁধে পাহাড়সম চাপ। টাইগারদের জন্যও সেটি ছিল বাঁচা-মরার লড়াই, হেরে গেলে বিদায় নিশ্চিত।
১৫৪ রানের লক্ষ্য রক্ষায় বাঁহাতি স্পিনার বল হাতে নেন প্রথম ওভারেই, এনে দেন দুর্দান্ত সূচনা। তার প্রথম বলটা হালকা গড়িয়ে যায়, সিম দেখে মনে হচ্ছিল পেসাদেরর ইন-সুইং, আঘাত হানে বাঁহাতি সেদিকুল্লাহ অটলের প্যাডে। আউটের পর রিভিউ নেওয়ারও দরকার মনে করেননি অটল।
এরপর টানা পাঁচ বল ডট দিয়ে পান উইকেট মেডেন, মুহূর্তেই চাপে ফেলে দেন আফগান ব্যাটারদের। শেষ পর্যন্ত চার ওভারে মাত্র ১১ রানে নেন দুই উইকেট, ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জেতেন তিনি।
৩০ বছর বয়সী নাসুম ম্যাচে বল থামাতে গিয়ে ডানহাতের বুড়ো আঙুলে চোট পান। পরদিন সেই আঙুলে জড়ানো ছিল অস্থায়ী ব্যান্ডেজ। দুবাই রওনা হওয়ার আগে তার অবস্থা জানতে চাইলে বলেন, 'হ্যাঁ, ব্যথা ছিল। তবে এখন ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ কোনো সমস্যা হবে না।'
২০২৩ বিশ্বকাপের সময় প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে ঘিরে এক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যায় তার নাম। সেখান থেকে তার সাদা বলের ক্যারিয়ার কিছুটা থমকে যায়—এক সিরিজে ডাক পেতেন, পরের সিরিজেই বাদ পড়তেন।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নাসুম মনে করেন, তিনি একাধিকবার ফেরার গল্প লিখেছেন। তবে প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারেরটা তার কাছে আলাদা, 'না, এরকম এর আগে আরও কয়েকটা হয়েছে। তবে গতকালেরটা একটু বিশেষ। কাল আমাদের জন্য ছিল বাঁচা-মরার ম্যাচ। সেই জন্যই এটাকে বিশেষ লাগছে।'
দলে তার অবস্থান সবসময়ই অনিশ্চিত—একাদশে অতিরিক্ত স্পিনার খেলানো না হলে তার সুযোগ আসে না। নাসুমের জন্য চ্যালেঞ্জ সবসময়ই প্রস্তুত থাকা, 'সত্যি বলতে আমি সবসময়ই খেলতে প্রস্তুত থাকি। সুযোগ এলে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ, কখনো হয়, কখনো হয় না। তবে এভাবে পারফর্ম করতে পারার জন্য অসংখ্য শুকরিয়া আল্লাহর কাছে।'
Comments