দুবাই থেকে

মাস্টার ‘ফিজ’

Mustafizur Rahman
ছবি: এসিসি

মোস্তাফিজুর রহমানকে ডাকা হয় 'কাটার মাস্টার'।  কাটারের মায়াবী দ্যুতি ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখে আলোড়ন তুলেছিলেন সেই এক দশক আগে। সেই কাটার কখনো কখনো ধারহীন হয়েছে বটে, তবে সাদা বলের ক্রিকেটে তার প্রভাব কখনো একেবারে ম্রিয়মাণ হয়নি। বরং তার কব্জির মোচড় ত্রাতা হয়ে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ বহু ম্যাচে। শনিবার রাতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুপার ফোরে তিনি যে মানের বোলিং করেছেন তাতে একটা শব্দই মুখ দিয়ে বেরুতে পারে- 'মাস্টারপিস'। মোস্তাফিজের বেলায় সেটা বলা যায়- মাস্টার 'ফিজ'।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মোস্তাফিজের উইকেটে এখন সাকিব আল হাসানের সমান ১৪৯টি। পরিসংখ্যান বলছে ১০৩টি উইকেট তিনি নিয়েছেন বাংলাদেশের জেতা ম্যাচে।  এসব ম্যাচে তিনি রান দিয়েছেন কেবল ৬.২০ করে। 

আরেকটি তথ্য দিলে মোস্তাফিজের প্রভাব আরও বোঝা যাবে। চলতি বছর টি-টোয়েন্টিতে মোস্তাফিজ খেলা মানেই যেন বাংলাদেশের জয়, আর মোস্তাফিজ না থাকলে হার। বাঁহাতি পেসারকে খেলা ৮ ম্যাচের সবগুলোই হেরেছে বাংলাদেশ, তাকে নিয়ে খেলে ১১ ম্যাচে হেরেছে স্রেফ একটিতে। মোস্তাফিজ অন্তর্মুখী মানুষ। হাসি, তামশা সবই করেন তবে নিজের গণ্ডির বাইরে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। অবসরে তার আশ্রয় সাতক্ষীরার গ্রাম। রেকর্ড, পরিসংখ্যান নিয়ে তার খুব একটা উচ্চবাচ্যও থাকার কারণ। উইকেট পেয়েও এমন উদযাপন করেন দেখে মনে হয় রুটিন একটা কাজ সারলেন মাত্র। 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের যেসব উইকেটে খেলা হচ্ছে তাতে বল কিছুটা গ্রিপ করে। মোস্তাফিজের জন্য যা খুব আদর্শ। এসব উইকেটে মোস্তাফিজকে সামলানো যে কতটা কঠিন টের পেয়েছেন লঙ্কান ইনিংসে ঝড় তোলা দাসুন শানাকা।

মাঝের ওভারে নেমে শানাকা এতটাই আগ্রাসী হয়ে গিয়েছিলেন যে তার সামনে বল ফেলার জায়গা পাচ্ছিলেন না তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলামরা। বাংলাদেশের অন্য দুই পেসার যথাক্রমে রান দিয়েছেন ১২.২০   ৯.২০ করে। অথচ ফিজের চার ওভার থেকে ২০ রানের বেশি নিতে পারেনি শ্রীলঙ্কা, উল্টো তারা হারিয়েছে ৩ উইকেট।

সুযোগ তৈরি হয়েছিলো আরও কয়েকটি। ফিজকে মারতে গেলেই বল উঠছিল আকাশে, কখনো ফাঁকা জায়গায় পড়ছিল। দু'একবার ফিল্ডারের হাত ফসকেও বেরুলো। মোস্তাফিজ এরকম স্পেল না করলে পাওয়ার প্লেতে শ্রীলঙ্কা যখন ৫৩ রান তুলে নিয়েছে, ৭ম ওভারে হাজির হয়ে রাশ টেনে ধরেন ফিজ। ওই ওভার থেকে আসে কেবল ৩ রান। এই চাপেই পরের ওভারে উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।

টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এমন হয়েছে অনেকবার। মোস্তাফিজের দেওয়া চাপের সুবাদে উইকেট পেয়েছেন অন্য পাশের বোলার। মোস্তাফিজ আবার বল করতে আসেন ১৪তম ওভারে, তখন একটা ব্রেক থ্রো ভীষণ প্রয়োজন। মাত্র ৬ রান দিয়ে তিনি তুলে নেন কুশল পেরেরাকে।

এরপর তো সেই ডেথ ওভারের ম্যাজিক। ১৭তম ওভারে আগ্রাসী শানাকে নাচিয়ে ছাড়েন, ক্যাচ ফসকে যায়, দেন কেবল ৬ রান। ১৯তম ওভারে জোড়া আঘাতে লঙ্কান ইনিংসকে ১৮০ রানের কাছে যেতে দেননি তিনি। এই উইকেটে ১৮০ রান হয়ে গেলে সাইফ হাসানদের ঝলক সত্ত্বেও ম্যাচ জেতা হয়তো সম্ভব হতো না।

স্কোরবোর্ডে লেখা থাকবে ম্যাচ সেরা নন মোস্তাফিজ, সেই পুরস্কার গেছে সাইফ হাসানের কাছে। কিন্তু প্রভাব হিসেব করলে মোস্তাফিজই মূলত বেধে দিয়েছেন সুর, তৈরি করেছেন জয়ের ভিত। সাকিব পরবর্তী বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় বিশ্ব তারকা তিনি। শুধু টি-টোয়েন্টি হিসেব করলে সেই জায়গা আরও উঁচুতে।

সাইফ হাসান যেমন বলছেন, 'আপনারা তো দেখতেই পারছেন উনি যখনই বল করে দল তখন একটা কঠিন পরিস্থিতিতে থাকে। মানে সবসময় বিপদের সময় বোলিংয়ে আসে। আর বেশিরভাগ সময় ডেলিভারও করে। কাজেই মার মনে হয় কঠিন পরিস্থিতিতে খুব বেশি ইম্প্যাক্টফুল।'

'ভাইয়ের বোলিং তো সবসময় ভালো হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরেই খুব ভালো একটা শেপে আছে উনি। আজকে এরকম রান হয়েছে, তার মাঝেও অনেক কম রান দিয়েছে। ভাইটাল মোমেন্টে উইকেট নিচ্ছে।'

কন্ডিশন উপযুক্ত, পরিস্থিতি আদর্শ। এবার এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে আরও বড় কিছু পাইয়ে দিতে পারে মোস্তাফিজের এমন ছন্দ।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

3h ago