এশিয়া কাপ ২০২৫

ফেভারিট ভারতের বিপক্ষে ‘মাঠের বাইরের ইস্যুতে’ শক্তি খুঁজছে পাকিস্তান

'অভিষেক শর্মা প্রথম বলেই আউট হবে, তারপর ম্যাচ আমাদের।' ফাইনাল নিশ্চিতের পর উৎসব করতে করতে ম্যাচ বলছিলেন একদল পাকিস্তানি সমর্থক। যে পাকিস্তান দল গ্রুপ পর্ব ও সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গে লড়াইও করতে পারেনি, যাদের ফাইনালে উঠা নিয়ে ছিলো বড় সংশয়। তারাই কীনা এখন শিরোপা জেতারও ছবি আঁকছে। দলের বেহাল পারফরম্যান্সে পাকিস্তানি সমর্থকরা হতাশ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন ক্রিকেট থেকে। সালমান আলি আঘারা ফাইনালে উঠে যাওয়ায় তারা এখন আবার ফিরতে শুরু করেছেন।

ভারতের যে দল এশিয়া কাপ খেলছে, স্কিল-সাম্প্রতিক ছন্দ বিচারে তারা পাকিস্তানের কাছে হারলেই বরং সেটা হবে বিস্ময়ের। দশ ম্যাচের সিরিজ হলে আশি ভাগ ম্যাচই জেতার কথা ভারতের। কিন্তু গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে ২০ ভাগের দিন যদি আসে ফাইনালে তাহলে আর কী! পাকিস্তানিদের স্বপ্ন দেখার সেটাই কারণ।

সব কিছু সাজানো গুছানো হলে নাকি পাকিস্তানের ক্রিকেট ঠিকভাবে চলে না। তাদের মোমেন্টাম পেতে লাগে বিশৃঙ্খলা। এমন একটা কথা চালু আছে বাজারে। এশিয়া কাপে ভারতের কাছে উড়ে যাওয়ার পর বিস্তর সমালোচনায় বিদ্ধ হয় দলটি। সেই সঙ্গে মাঠের বাইরের বিতর্ক জড়ো হওয়ায় কোণঠাসা অবস্থা দাঁড়ায়।

পাকিস্তানি বিশ্লেষকদের মতে  বিশৃঙ্খলা থেকে কিক পেয়ে গেছে পাকিস্তান। ভারতের ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের মতে, 'পাকিস্তানের হারানোর কিছু নেই, আর এটাই তাদের শক্তি। পাকিস্তানের মতন দলকে হিসেবের বাইরে রাখার কারণ নেই। আমার মনে হয় না সূর্যকুমার যাদবরা প্রতিপক্ষের ক্রিকেটীয় দক্ষতাকে অসম্মান করেন।'

কথাটা এসেছে কারণ ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব সুপার ফোরের লড়াইয়ে জেতার পর দম্ভ ভরে বলছিলেন, 'এটা আর রাইভেলারি নয়। পরিসংখ্যান ১০-০ বা ১৩-২…এটা কে রাইভেলারি বলা যায় না।'

তার সেই কথায় অহংয়ে আঘাত লাগার কথা পাকিস্তানের। ভারতের বিপক্ষে শক্তির বিচারে অনেক পিছিয়ে থাকা পাকিস্তান জিতে গেলে সেটা হবে আসরের বড় সারপ্রাইজ। কিন্তু ক্রিকেটে তো এমন অনেক কিছু দেখা যায়।

সূর্যকুমারের কথাটা পছন্দ হয়নি খোদ তার স্বদেশী সাংবাদিকদের। তারা বলছিলেন, 'স্কাই নিজেকে জাহির করতে সংবাদ সম্মেলনে যেসব বলে তা সেন্স মেইক করে না, মনে হয় সে আরোপিত বলছে।'

মুখের মতন সূর্যকুমারের ব্যাট এই আসরে চলছে না। এক সময় টি-টোয়েন্টিতে দুনিয়ার সেরা ব্যাটার গোটা টুর্নামেন্ট খেলছেন নিজের ছায়া ম্যাচে করেছেন মোটে ৭১ রান, গড় ২৩.৭৭, স্ট্রাইকরেট ১০৭.৫৭।

সূর্যকুমার রানে না থাকা ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার নাম। না হলে দলটির খুঁত খোঁজে পাওয়া মুশকিল। জাসপ্রিত বুমরাহ এক ম্যাচে বিবর্ণ থাকার পরই ফিরে এসেছেন নিজের চেনা ছন্দে, মাঝের ওভারে ভারতের স্পিনাররা প্রতিপক্ষের জন্য হয়ে উঠছেন বড় আতঙ্ক।

ব্যাটিং অর্ডারে বিস্তর উলট-পালট করে গৌতম গম্ভীর খুব যে ফল পাচ্ছেন তা নয়। ভারতের রানের যোগান দিচ্ছেন মূলত অভিষেকই। এই ওপেনার শুরুতে আউট হয়ে গেলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে সেটা কৌতূহলের বিষয়।

তিলক বর্মা, শুভমান গিলরা কিছুটা রানে আছেন, সঞ্জু স্যামসনকে কোথায় খেলাবেন সেই ধাঁধার সমাধান মিলেনি।

পাকিস্তানের সুযোগ নেওয়ার জায়গা আছে অবশ্যই। দলটির প্রধান কোচ মাইক হেসন আগের দুই হার ভুলে সেই সুযোগই নিতে চান, 'এই সুযোগটা আমাদের প্রাপ্য ছিল। তাই এখন আমাদের দায়িত্ব হলো এর সর্বোচ্চ ব্যবহার করা। আমরা জানি যে আমরা ১৪তম দিনে খেলেছি (গ্রুপ পর্বে হেরেছি), ২১তম দিনে খেলেছি (সুপার ফোরে হেরেছি), কিন্তু আসলে একটা ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ, শেষের ম্যাচটিই গুরুত্বপূর্ণ। আর অবশ্যই এটাই আমাদের লক্ষ্য হবে আমাদের সেরা খেলাটি খেলার চেষ্টা করা।'

এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের অনেক দিনের স্বপ্ন এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান। এই দুই দলের ফাইনাল মানেই যে বিপুল বাণিজ্যের সুযোগ।  এর আগে ১৭ আসরে কখনই এই স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাদের। এবার সেদিক থেকে ইতিহাস গড়া ম্যাচ, যেখানে সবচেয়ে হাসি চওড়া এসিসির।

তবে ফাইনাল ম্যাচ ঘিরে কোন রকম আবহই তৈরি করতে পারেনি তারা। আগের রাতে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচ শনিবার ভারতীয় দল মাঠমুখো হয়নি, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতার পর বোলিং কোচ মরনে মরকেলকে পাঠিয়ে পোস্ট ম্যাচের ব্রিফের সঙ্গে প্রি-ম্যাচ প্রেসমিটেরও দায় সেরে নিয়েছে তারা। পাকিস্তান দল অবশ্য একদিন বিশ্রামের পর ম্যাচের আগের রাতে অনুশীলন করেছে।

এমনিতে যেকোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালের আগে দুই দলের অধিনায়কদের ট্রফি নিয়ে ফটোসেশন দেখা যায়। ভারত-পাকিস্তান দুই দল যেমন বৈরি অবস্থানে আছে তাতে ওইরকম কোন আয়োজনের চিন্তাই করেনি এসিসি।

Comments

The Daily Star  | English
UN expert on mob violence against media Bangladesh

Impunity at the core of mob violence against media: UN expert

Irene Khan says attacks did not emerge in a vacuum

4h ago