রাকসু নির্বাচন

একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও গবেষণার দিকে মনোযোগ দেবো: তাসিন খান

‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী তাসিন খান। ছবি: সংগৃহীত

জয়ী হলে গবেষণায় গুরুত্ব দিয়ে একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে প্রশাসনকে চাপ দেবেন বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী তাসিন খান।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে 'সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ' প্যানেলের এই ভিপি প্রার্থী বলেন, প্রতিষ্ঠার ৭২ বছরেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্রকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠেনি। দিনশেষে একজন শিক্ষার্থী এখান থেকে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে নয়, রাজনৈতিক কর্মী কিংবা আনস্কিলড থেকেই বের হচ্ছে। আমরা জনগণের করের টাকায় পড়ছি। কিন্তু পড়া শেষে দেশকে কিছু ফিরিয়ে দিতে পারছি না। এখানে শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে কর্মসংস্থানের বড় ফারাক আছে। আমি যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে আমার বেশকিছু পরিকল্পনা আছে। শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে কর্মসংস্থানে ফারাক কমিয়ে রাবিতে শিক্ষার পরিবেশ ও মান নিশ্চিত করার ভাবনা থেকেই আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি।

তাসিন বলেন, শিক্ষার্থীরা জানেন যে রাকসুতে আমার ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই। যেহেতু আমি রাজনীতি করি না কিংবা ভবিষ্যতেও যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে নেই, তাই রাকসুকে ব্যবহার করে আমার কোনো রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। এই ক্যাম্পাসকে ভালোবাসি, এখানকার শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছে আছে, সেই কারণেই কোনো ধরনের সাংগঠনিক সমর্থন ছাড়াই স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। আমি কী করব, সেটা অন্য কোনো সংগঠন বা দল নির্ধারণ করে দেবে না। সবকিছুই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা তাদের মতামত নিয়ে করব।

'অনেক সংগঠনও সম্পূর্ণ প্যানেল ঘোষণা করতে পারেনি বা হিমশিম খেতে হয়েছে। কিন্তু আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব শুনে এমন কিছু মানুষ আমার প্যানেলে এসেছেন, যারা নিজ নিজ সেগমেন্টে যোগ্য, অভিজ্ঞ। সেই জায়গা থেকে মনে করি শিক্ষার্থীরা আমার ওপর ভরসা রাখবেন। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে তো শিক্ষার্থীরা দেখেছেন আমাকে, আমি কীভাবে সোচ্চার ছিলাম। অন্যায়ের বিরুদ্ধেও আমার অবস্থান শক্তিশালী।'

নির্বাচিত হলে কী করবেন, জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই সমন্বয়ক বলেন, নির্বাচিত হলে এক বছর কাজ করার সুযোগ পাব। তাই আমি ইশতেহারে যা যা বলছি, সবই বাস্তবসম্মত। কিছু আমি করে ফেলতে পারব, আর কিছু কাজ শুরু করে দিয়ে যাব। এমন কোনো প্রতিশ্রুতি আমি দিচ্ছি না যা করতে পারব না। রাবির ৫০ বছরের অবকাঠামোর একটা মাস্টারপ্ল্যান আছে। কিন্তু একাডেমিক কোনো প্ল্যান নেই। আমরা এখন যা পড়ছি, বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তা খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ না। সেজন্য শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে বের হয়েও স্ট্রাগল করে। কারণ তারা যথাযথ স্কিলড হয়ে তৈরি হয় না। সেই জায়গা থেকে আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অভিজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে ১০ বছরের জন্য একটা একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান তৈরি করব, যেটা অনুসরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে।

'দ্বিতীয়ত গুরুত্ব পাবে গবেষণা। গবেষণাকে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণ বলা হয়। অথচ আমরা দেখি রাবির বাজেটের ২-৩ শতাংশ গবেষণার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। আবার এটুকু বাজেটও শিক্ষকরা এমনভাবে নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেন যে, গবেষণাটাকে তারা কেবল তাদের পদোন্নয়নের জন্য ব্যবহার করেন। এই জায়গাগুলোতে কীভাবে সুষ্ঠু করা যায়, শিক্ষার্থীদেরকে আরও কীভাবে অংশগ্রহণ করানো যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করব।'

তাসিন বলেন, শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করবে কিংবা মুখরোচক কোনো ইশতেহার আমরা দিইনি। যেগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য প্রকৃতপক্ষে প্রয়োজন এবং আমরা করতে পারব, সেগুলোর কথাই আমরা বলছি। ধরুন, আমরা দেখছি যে অনেকে পূর্ণাঙ্গ আবাসিকতার কথা বলছে। এটা অবশ্যই খুবই জরুরি ও প্রয়োজনীয়। কিন্তু আমাদেরকে এটাও ভাবতে হবে যে, আমরা জনগণের করের টাকায় পড়াশোনা করি। পূর্ণাঙ্গ আবাসিকতা দিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাজেট বাড়াতে হবে। সেটা কোত্থেকে আসবে? জনসাধারণের টাকা থেকে। বিনিময়ে আমরা তাদের কী দিতে পারছি? আনস্কিলড হয়ে বের হয়ে আমরাই তো হিমশিম খাচ্ছি। তাই শিক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

'এ ছাড়া, খাবারের মান, পরিবহন, চিকিৎসা, নিরাপত্তাসহ শিক্ষার্থীদের মৌলিক যে সমস্যাগুলো আছে, সেগুলো সমাধানেও আমরা কাজ করব। সমস্যাগুলো ওপর থেকে নয়, একদম গোড়ায় হাত দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করব।'

রাকসু নিয়মিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের ইশতেহারে ১২টি পয়েন্টের একটি রাকসুকে ক্যালেন্ডারভুক্ত করা, যাতে প্রতি বছর নির্ধারিত সময়ে রাকসু অনুষ্ঠিত হয়।

প্যানেলের বিষয়ে তাসিন বলেন, আমার সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে আমাদের প্যানেল। এখানে তিনজন আদিবাসী আছেন, তিনজন নারী আছেন, তিনজন হাফেজ আছেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীর একজন আছেন। এই ক্যাম্পাসের যতগুলো স্টেক আছে, যতগুলো ভয়েস আছে, যেগুলো আসলে মূলধারায় উঠে আসে না, আমরা তাদেরকে রাখার চেষ্টা করেছি। আমাদের প্যানেল অন্তর্ভুক্তিমূলক।

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারেনি। সেই কারণে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা একটা অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে গেছি। অনেকে আচরণবিধি লঙ্ঘন করার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। 

বলা হচ্ছে, রাকসুর ভিপি পদে এই প্রথম কোনো নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তাসিন বলেন, আমিও একটু অবাক হয়েছি যে, শীর্ষ এই পদে আমি ছাড়া আর কোনো নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। কিন্তু দিনশেষে নারী বা পুরুষ প্রার্থী হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আমি আমার কাজের মাধ্যমে পরিচিত। কাজের মাধ্যমেই পরিচিত থাকতে চাই।
 

Comments

The Daily Star  | English

Ocean of mourners gather to pay tribute to Khaleda Zia

People from all walks of life arrive by bus, train and other modes of transport

1h ago