রাবি: সিন্ডিকেটেও পোষ্য কোটা স্থগিত, শিক্ষক-কর্মচারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি

পোষ্য কোটা বহালের দাবিতে 'কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
আজ রোববার বিকেলে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পোষ্য কোটা স্থগিতের সিদ্ধান্তের পর এ ঘোষণা দেন তারা।
এর আগে, পোষ্য কোটা স্থগিতের প্রতিবাদে আজ রোববার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
তবে এর ব্যতিক্রমও দেখা গেছে—আইন বিভাগের অধ্যাপক মোরশেদুল ইসলাম খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেন।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার পোষ্য কোটা বহালে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শনিবার পোষ্য কোটা স্থগিত করা হয়।
পরে কোটা পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোল শুরু করলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
শনিবার জুবেরী ভবনে সংঘটিত ঘটনায় হামলাকারী শিক্ষার্থীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে 'প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা আন্দোলনের' নেতা জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আলিম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এরপর আজ রোববার সকালে বুদ্ধিজীবী চত্বরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান নেন। বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস বন্ধ ছিল, আর প্রশাসনিক অফিসগুলোতে তালা দেখা যায়।
এদিকে, কর্মবিরতির কারণে রাকসু নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রচারণা আগের দিনের মতো উৎসবমুখর ছিল না। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত রাকসু নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
প্রার্থীদের আশঙ্কা, ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকলে নির্বাচনে অংশ নিতে শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
স্বতন্ত্র সিনেট সদস্য পদপ্রার্থী ইরফান তামিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কর্মবিরতি চলতে থাকলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব হবে না। ক্লাস-পরীক্ষা না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যাবে। এতে সংগঠনভিত্তিক ভোটব্যাংক আছে এমন প্রার্থীরা সুবিধা পাবে।'
সর্বজনীন ছাত্র পরিষদের ভিপি প্রার্থী তাসিন খান বলেন, 'নির্বাচনের পরিবেশ আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে, ভোটের জন্য আসে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন ভূমিকা দুঃখজনক। আগামীকাল পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি শুরু হলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে থাকবে কেন? আমি বলব, এমন প্রহসনের নির্বাচন না করে প্রশাসনের উচিত সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা।'
শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক রোখসানা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা যে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার দাবি জানাচ্ছি, তা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আছে। যদি বাতিল করতে হয়, তাহলে সবখানে বাতিল করতে হবে।'
জানতে চাইলে রাবি কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, 'আমরাও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এ কারণে রাকসুকে কর্মসূচির বাইরে রাখা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল আমরা দেবো। তবে ক্লাস, পরীক্ষা, একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।'
রাবি কর্মকর্তা সমিতির কোষাধ্যক্ষ মাসুদ রানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের দাবি পূরণ না হলে আগামীকাল সোমবার থেকে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি শুরু হবে।'
তবে রাকসু নির্বাচন তাদের কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রাবি উপ-উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, 'কর্মবিরতি রাকসু নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে, তা নিশ্চিত। কর্মকর্তারা বলছেন, রাকসু নির্বাচন তাদের কর্মসূচির বাইরে। কিন্তু শিক্ষক ও কর্মচারীদের সবার মতামত এখনো জানি না। আমরা বাইরে থেকে লোকবল আনতে পারব না, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাই আমাদের একমাত্র ভরসা।'
এদিকে, শনিবার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ বিকেলে জরুরি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে রেজিস্ট্রার ইফতেখার আলম মাসুদ সাংবাদিকদের জানান, শনিবার উপ-উপাচার্যের ওপর হামলার ঘটনায় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রেজিস্ট্রার আরও জানান, সিন্ডিকেট আশা করেছে যে রাকসু নির্বাচন সময়মতো অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, 'রাকসু নির্বাচন কর্মবিরতির আওতার বাইরে থাকবে।'
তিনি আরও বলেন, সিন্ডিকেট 'প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা' স্থগিতের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে এবং এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা শিগগিরই দেওয়া হবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোক্তার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা আগামীকাল থেকে 'কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচি পালন করবেন।
Comments