‘পোষ্য কোটা’ স্থগিত নিয়ে যা জানাল রাবি প্রশাসন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের ভর্তি সুবিধা ঘিরে শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মাঝে বিরাজমান অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে প্রশাসন।
আজ বৃহস্পতিবার রাবি জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন মজুমদারের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা হিসেবে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ছেলেমেয়েদের ভর্তির রেওয়াজ দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত আছে।
কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বারবার আলোচনার পর দীর্ঘদিনের এই 'প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা' নিয়ে ধাপে ধাপে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের দাবিতে কোটা ৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নামানো হয়। এরপর চলতি বছর জানুয়ারিতে কোটা কমিয়ে শুধু কর্মচারীদের জন্য ১ শতাংশ রাখা হয়।
এরপর, শিক্ষক–কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মুখে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ১০টি শর্ত দিয়ে কোটা পুনর্বহালের সুপারিশ দেয়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ অনুমোদন হয়।
কিন্তু শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। গত ১৯–২০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন নির্ধারিত ২৫ সেপ্টেম্বর হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।
এক পর্যায়ে ২০ তারিখ দিবাগত রাতে উপাচার্য কোটা স্থগিত করেন।
পরদিন সিন্ডিকেটের জরুরি বৈঠক শেষে প্রশাসন জানায়, ক্যাম্পাসে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। একইসঙ্গে তারা জানান, ভর্তি সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মতামতের ভিত্তিতেই নেওয়া হয়েছে এবং রাকসু নির্বাচন যথা সময়েই হবে।
কিন্তু, ২০ সেপ্টেম্বর জুবেরী ভবনে শিক্ষার্থীদের 'মারমুখী ও অপ্রীতিকর' ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ২১-২২ সেপ্টেম্বর 'শাটডাউন' কর্মসূচি দেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস ও একাডেমিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের আন্দোলন প্রত্যাহার কিংবা পিছিয়ে নেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধের পরও তারা অনড় অবস্থানে থাকায় রাকসু নির্বাচনকে বাধামুক্ত করতে সঙ্গতকারণেই প্রশাসন এরকম উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।'
এতে আরও বলা হয়, '২৩ সেপ্টেম্বর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কর্মকর্তা-দুপুর থেকে তারা কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন। শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও কর্মবিরতি প্রতাহারের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।'
'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশা করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় সামগ্রিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে,' বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহির আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিজ্ঞপ্তি পড়ে যতটুকু বুঝলাম সেটা হলো প্রশাসন পুরো বিষয়টাকে স্পষ্ট করতে গিয়ে উল্টো ঘোলা করে ফেলেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে প্রশাসন একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে, আবার অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মন জুগিয়ে চলার মতোও কথা বলেছে। পুরো বিষয়টি এখন আরও অস্পষ্ট হয়ে গেল।'
জনসংযোগ প্রশাসক আখতার হোসেন মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমরা প্রশাসন থেকে বোঝাতে চেয়েছি যে, আমরা বিভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু দিনশেষে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থই দেখতে চেয়েছি। আশা করি, শিক্ষার্থীরা আমাদের বিজ্ঞপ্তিটি বুঝতে পারবে।'
Comments