ক্যাম্পাসে সামাজিক চুক্তি করব, লঙ্ঘনকারী সংগঠন অবাঞ্ছিত হবে: ফুয়াদ রাতুল

জয়ী হলে ক্যাম্পাসে সমতা নিশ্চিতে একটি সামাজিক চুক্তি বাস্তবায়ন করতে চান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল।
দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে 'গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ' প্যানেলের এই ভিপি প্রার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের অধিকারের পক্ষে আমি সোচ্চার। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। বিগত শাসনামলে যে অল্প কয়েকজন ছাত্রলীগের আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে কথা বলত, আমি তাদেরই একজন। অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপস করিনি। জুলাই আন্দোলনে সমন্বয়ক হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলাম। বরাবরই আমি শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হিসেবে ছিলাম। সেখান থেকেই নির্বাচনের ভাবনা।
'রাকসুতে নির্বাচিত হলে সব শিক্ষার্থীর প্রতিনিধি হয়ে কথা বলতে পারব। সেক্ষেত্রে দাবি-দাওয়া আদায় তুলনামূলক সহজতর হবে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের উপহারসামগ্রী দিচ্ছি না। এটাকে নৈতিকও মনে করছি না। আমি মনে করে শিক্ষার্থীরা আমার লড়াই-সততার ওপর আস্থা রেখে আমাকে ভোট দেবে।'
নির্বাচিত হলে কী করবেন, জানতে চাইলে ফুয়াদ রাতুল বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন সন্ত্রাস-দখলদারিত্বের ছাত্ররাজনীতি আমরা দেখেছি। নির্বাচিত হলে সবার আগে চেষ্টা করব কীভাবে ছাত্র সংগঠনগুলোকে একটা প্রতিশ্রুতির মধ্যে নিয়ে আসা যায়। এর জন্য একটা সামাজিক চুক্তি করব। যারা এই চুক্তি লঙ্ঘন করবে, শিক্ষার্থীরা তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা সামাজিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
'আমি নিশ্চিত করব এই ক্যাম্পাসে যাতে কোনো ধরনের বৈষম্য না থাকে। যেকোনো পরিচয়ের ঊর্ধ্বে গিয়ে সবাই সমান হয়ে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে যথাযথ বাজেট বরাদ্দসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া নিশ্চিত করব। একইসঙ্গে আবাসন, খাবার, চিকিৎসা, নারীদের নিরাপত্তা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা, লাইব্রেরি, পরিবহনসহ মৌলিক যে সংকটগুলো আছে, সেগুলো সমাধানে কাজ করব।'
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের এই নেতা বলেন, শিক্ষকদের মান নির্ধারণে শিক্ষার্থীদের স্বাধীন রেটিং ব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এর ফলে শিক্ষকদের আধিপত্য দূর হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হতে হবে সিনিয়র ও জুনিয়র স্কলারের মতো। কারো কোনো ধরনের আধিপত্য থাকবে না। পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি-দলীয়করণ-স্বজনপ্রীতি দূর করার বিষয়টি নিশ্চিতেও কাজ করব।
'একইসঙ্গে ফ্যাসিস্ট ও গণহত্যাকারী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত ছাত্রলীগ এবং দলদাস আওয়ামী শিক্ষক-কর্মচারীদের সব দলীয় তৎপরতা স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ এবং তাদের অপরাধের তদন্ত ও শাস্তি নিশ্চিতে কাজ করব।'
রাকসু নিয়ে ফুয়াদ রাতুল বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পরে রাকসু নির্বাচন হচ্ছে। মাঝে ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদী আমল গিয়েছে। এই সময়টায় আমরা কেউই গণতন্ত্রের স্বাদ পাইনি। সেক্ষেত্রে রাকসু একটা নতুন অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে। ফলে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আমি চাই রাকসু নিয়মিত হোক। নির্বাচিত হলে সবার আগে আমি চেষ্টা করবো রাকসুকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে যুক্ত করতে। তা ছাড়া আমরা জানি যে রাকসু সভাপতির ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি। সেই একচ্ছত্র ক্ষমতা কমিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করব।
নির্বাচনের পরিবেশ তিনি বলেন, আমরা দেখছি, কেউ কেউ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন, শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের উপহারসামগ্রী দিচ্ছেন। কিন্তু বারবার বলার পরেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নির্বাচনে সমতা নিশ্চিত করতে আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম একজন প্রার্থী কত টাকা খরচ করতে পারবে তা ঠিক করে দিতে। কিন্তু প্রশাসন সেটা আমলে নেয়নি। আবার একটা গোষ্ঠী নির্বাচন বানচালের চেষ্টাও করছে। সেটা আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। রাকসু যাতে অনুষ্ঠিত হয়, অবশ্যই তা নিশ্চিত করতে হবে।
সবশেষে ফুয়াদ রাতুল বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে আমরা ক্যাম্পাসে একটি সংগঠনকে আধিপত্য বিস্তার করতে দেখেছি। আমরা সেই প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ৫ আগস্ট পরবর্তীতে আরেকটি সংগঠন আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। আমি মনে করি, সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেটা মেনে নেবে না। তারা অবশ্যই যোগ্য প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবে।
Comments