কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীর ভোটে নেতা নির্বাচন করছে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রদল

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের কাউন্সিলে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভোট দিচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। ছবি: আনিস মন্ডল/ স্টার

উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করছে‌ কুষ্টিয়া কলেজ ছাত্রদল। গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থী মিলে সর্বমোট ৪৬২ জন।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজ প্রাঙ্গণে দেখা যায় উৎসবমুখর পরিবেশ। ছোট ছোট টেবিলে দলের নেতাকর্মীরা বসে টোকেন বিতরণ করছেন ভোটারদের মাঝে। ভোটাররা নাম বলে সংগ্রহ করছেন সেসব টোকেন। কলেজের মুক্তমঞ্চের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে পুরুষ ও নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বুথ। সেখানে তদারকি করছেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোজাক্কির রহমান রাব্বি, সদস্য সচিব খন্দকার তসলিম উদ্দিন নিশাত ও কুষ্টিয়া কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কলেজে উপস্থিত হন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। তিনি মঞ্চ প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকার সঙ্গে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কাউন্সিল উদ্বোধন করেন।

নেতা নির্বাচনের এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে নাছির উদ্দীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দলে আগেও ভোট হয়েছে। তবে সেসময় স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছিল না। একটি অগণতান্ত্রিক সরকার ছিল। গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল হয়েছে। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ দিয়ে এই পর্বে প্রথমবারের মতো ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন শুরু হলো। সাধারণ শিক্ষার্থীরাই ছাত্রদলের নেতা নির্বাচন করবে। তারাই নির্ধারণ করবে তাদের নেতা কেমন হবে।'

তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনুস আজ যে আয়নাঘর পরিদর্শন করতে গিয়েছেন সেখানে ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মী বন্দি ছিলেন। আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়েছে। এত দেরিতে যে আয়নাঘর পরিদর্শনে গেছেন সেটাই আমাদের কাছে রহস্যজনক।'

নাছির বলেন, '৬-৭ তারিখে এই আয়নাঘর পরিদর্শন করতে দেওয়া উচিত ছিল। এখন দেরিতে হলেও বাংলাদেশের মানুষ দেখছে খুনি হাসিনা বিরোধীমতকে দমন করতে কী নিষ্ঠুর নির্যাতন করেছে।'

কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী জাসির আহমেদ মসনদ ও তৃতীয় বর্ষের মোতাসিম বিল্লাহ নয়ন। দুজনেই বলছেন ভোটের ফলাফল যাই হোক পরস্পরকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন।

মসনদ বলেন, দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোটে যদি জয়ী হই, তাহলে তাদের আস্থার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করব।

অন্যদিকে নয়ন বলেন, ভোটের আবহ খুবই সুন্দর লাগছে। নেতা নির্বাচনে এখান থেকে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও শিক্ষা নিতে পারবেন। আমি যদি হেরেও যাই, তবু দলের পক্ষে সব সময় সক্রিয় থাকব।

সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তিনজন। তারা হলেন, সজীব আলী, শিমুল হোসেন, শোয়েব আক্তার সামি।

কাউন্সিল আয়োজনের দায়ত্বে থাকা কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক মোজাক্কির রহমান রাব্বি বলেন, জেলা থেকে নেতা নির্বাচনের সংস্কৃতি থেকে আমরা বের হয়ে আসছি। এবার সাধারণ শিক্ষার্থীরাই নেতা নির্বাচন করছেন। নেতা নির্বাচন স্বচ্ছ হলে, সংগঠনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বাড়বে।

কাউন্সিল অনুষ্ঠানে এসেছেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাহফুজুর রহমান মিথুন। ভোটের ব্যবস্থা দেখে এই নেতা বলেন, আমাদের সময়ে এমন গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচনের সুযোগ ছিল না। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে আমরা কর্মসূচি পালনেও বাধাগ্রস্ত হয়েছি। সেখানে এমন নির্বাচন ছিল কল্পনাতীত।

নির্বাচনে টোকেন কালেকশনের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ শাহরিয়ার জাহান বলছিলেন, ছোটবেলা থেকে ভোটের কথা শুনেছি, কিন্তু প্রকৃত ভোট কখনো দেখিনি। এবার একটি স্বচ্ছ ভোটে নিজেই দায়িত্ব পালন করছি। অনেক ভালো লাগছে। আশা করছি শেষ পর্যন্ত ভোট ভালো হবে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মুক্তমঞ্চের পাশে লাইন ধরে ভোট দিচ্ছিলেন শতাধিক শিক্ষার্থী। সবার মধ্যে ছিল ভোট দেওয়ার আনন্দ।

Comments

The Daily Star  | English

One killed in crude bomb blast during clash at Mohammadpur Geneva Camp

The victim, Zahid, was not involved in the clash and had gone out with friends when he got caught in the middle of the violence, family says

21m ago