জাকসু নির্বাচন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সবার আগে: আব্দুর রশিদ জিতু

আব্দুর রশিদ জিতু। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে 'স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন' প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বলেন, শিক্ষার্থীদের পরামর্শেই আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। কারণ ভিপির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচন করতে হলে সবার সমর্থন বা সহযোগিতা দরকার। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও প্যানেল ঘোষণা করেছে। রাজনৈতিক দলের বাইরে গিয়ে আমরা এই প্যানেল ঘোষণা করছি। যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে আমরা আমাদের প্যানেল ঠিক করেছি। অর্থাৎ যিনি যে কাজে পারদর্শী বা অভিজ্ঞ, তাকে সেই পদে দিয়েছি। আমাদের প্যানেল ইনক্লুসিভ, যেখানে সবার মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে আছেন বলেই আমরা সাহস পাই। সাধারণ শিক্ষার্থীরাই আমাদের দল, আমরা তাদের দলের কর্মী—এই আত্মবিশ্বাস থেকে আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি।

নির্বাচিত হলে কী করবেন, জানতে চাইলে জিতু বলেন, নির্বাচনের আগে অনেকেই অনেক ইশতেহার দেয়। কিন্তু আগে জানতে হবে যে জাকসু কাঠামোর মধ্যে আমার কী কী কাজ করার এখতিয়ার আছে। সেই অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করব। আমি বলব না যে নির্বাচিত হলে ক্যাম্পাস গেট পর্যন্ত মেট্রোরেল নিয়ে আসব। আমি শিক্ষার্থীদের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করব, যাতে বছরের পর বছর ধরে তারা উপকৃত হন। শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করব আমি। আমার একটাই কথা—জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সবার আগে।

'তা ছাড়া, এখানে তো অনেকগুলো স্টেক আছে—শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী। ইউনিভার্সিটির অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী যার যা প্রাপ্য, তার জন্য সেটা নিশ্চিত করব। এখানে শিক্ষকদের একক আধিপত্যবাদী আচরণ যাতে না থাকে, তা নিশ্চিতে কাজ করব।'

তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি আমাদের অবশ্যই একাডেমিক রিফর্ম করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতের পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাবিকে যাতে আমরা গুণগত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি। জাবি একটি গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে কাজ করব। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারমুখী করে তুলতে কাজ করব।

'আমি যদি শিক্ষার্থীদের আস্থা বা ভরসার জায়গাটা দখল করতে পারি, তাহলে তো শিক্ষার্থীরা আমাকে বেছে নেবেন। শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে জানেন যে, যেকোনো সমস্যা বা দুঃসময়ে তাদের পাশে আমাকে পাবেন। গণঅভ্যুত্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে আমি নেতৃত্ব দিয়েছি। এরপর থেমে যাইনি। আমার জায়গা থেকে আমি কাজ করে যাচ্ছি। ৩৩ বছর পর জাকসু হচ্ছে। আমি নির্বাচিত হলে জাকসু ধারাবাহিক রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে বিদায় নেবো—এই প্রতিশ্রুতি থাকবে।'

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সব কিছু ভালো আছে। জাকসু নিয়ে আমরা অনেক আশাবাদী। কিন্তু নিরাপত্তাসহ কিছু বিষয় নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কথা দিয়েছিল যে, তফসিল ঘোষণার পর পুরো ক্যাম্পাস নিরাপত্তা চাদরে ডেকে দিবে। কিন্তু আমরা এখনো দেখছি যে ক্যাম্পাসে সাবেকদের প্রবেশ বেড়েছে এবং তারাও প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এটা আচরণবিধির লঙ্ঘন। আবার বহিরাগতরাও অবাধে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমরা আশা করি এসব সমস্যার সমাধান হবে।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিজের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়ে জিতু বলেন, 'বিগত সময়ে আমাকে ছাত্রলীগের তৎকালীন জাবি কমিটিতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু গত বছরের ১ জুলাই থেকে আমি কোটাবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেই। ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমার ওপর হামলা চালায় এবং আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সেই রাতেই আমি অফিসিয়ালি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করি। জাহাঙ্গীরনগরে জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব আমিই দিয়েছি, এক দফাও দিয়েছি। তারপরের ইতিহাস তো সবার জানা।'

সবশেষ তিনি বলেন, আমি আশা করব, যারাই নির্বাচিত হবেন, হয়তো বিভিন্ন প্যানেল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের থেকে বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হয়ে তারা আসবেন, কিন্তু দল-মত নির্বিশেষে তারা এক হয়ে কাজ করবেন। সবাই শিক্ষার্থীদের স্বার্থ দেখবেন। শিক্ষার্থীবান্ধব একটি ক্যাম্পাস গড়ে তুলবেন।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s body being taken to Manik Mia Avenue for janaza

Janaza will be held at Manik Mia Avenue at 2pm

2h ago