ইলিশের ভরা মৌসুমেও ভোলার জেলে পল্লীতে বিষাদ, বাড়ি ফেরেনি ১৯ জেলে

ভোলা সদর উপজেলার দীঘলদি ইউনিয়নের জেলেপাড়া জুড়ে চাপা আতঙ্ক। এখানকার ১৯ জেলে দুই সপ্তাহ আগে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আজও বাড়ি ফেরেনি।
দারিদ্রপীড়িত এই জেলে পরিবারগুলোর মুখে খানিকটা হাসি থাকে ইলিশের এই ভরা মৌসুমেই। এমন সময়ে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মাছ ধরতে গিয়ে বাড়ি না ফেরায় পুরো জেলেপাড়ায় নেমে এসেছে দুশ্চিন্তা আর আতঙ্ক।
পরিবারগুলোর দাবি, তাদের স্বজনরা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কাকদ্বীপে বিএসএফের হাতে আটক হয়েছে এবং সেখানকার স্থানীয় খবরের ভিডিওতে তারা তাদের স্বজনদের দেখতে পেয়েছেন।
তারা আরও জানান, বিএসএফ তাদের কোস্টাল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছিল। বর্তমানে তারা আলিপুর আদালতের নির্দেশে কারাগারে রয়েছেন।
নিখোঁজ শফিকুল মাঝির ভাই ইব্রাহিম বলেন, 'আমার ভাই শফিকুল মাঝিসহ ১৯ জন সাগরে মাছ ধরতে যায়। তারপর তাদের আর কোনো খবর না পেয়ে আমরা ১৮ সেপ্টেম্বর ভোলা সদর থানায় জিডি করি।'
তিনি বলেন, 'আমরা ইউএনও-র সঙ্গে দেখা করলে তিনি জিডিসহ নাম-পরিচয় দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী আজ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আবেদন করি।'
অপর নিখোঁজ জেলে রাজিব কুমার দাসের ভাই রূপক কুমার দাস বলেন, 'সাধারণত সাগরে গেলে জেলেরা এক সপ্তাহের মধ্যেই চলে আসে। গত ৫ সেপ্টেম্বর রওনা হয়ে ১২ তারিখেও না আসলে আমরা খোঁজখবর করতে থাকি। পরে আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, কাকদ্বীপে শফিকুল মাঝির ট্রলার আটক করেছে বিএসএফ।'
তিনি বলেন, 'ওখানকার খবরে সবার ভিডিও দেখলাম। আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারি, তাদেরকে আলিপুর আদালতের মাধ্যমে বারুইপুর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। পরে সেখানকার একজন আইনজীবী ও আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয় ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে।'
সার্বিক অবস্থায় আয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দরিদ্র এই পরিবারগুলো চরম আর্থিক দুরবস্থায় পড়েছে।
পরিবারগুলো জানায়, তাদের একমাত্র আয়ের উৎস মাছ ধরা। কিন্তু, এত দীর্ঘ সময় তাদের পরিবারের জন্য একমাত্র আয় করা ব্যক্তি ঘরে না ফেরায় তারা একদিকে যেমন দুশ্চিন্তায় আছেন, তেমনি সংসার চালাতেও হিমশিম খাচ্ছেন।
তবে, নিখোঁজ পরিবারগুলো জানিয়েছে, ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে তারা ৩০ কেজি করে চাল পেয়েছে।
ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসনাইন পারভেজ জানান, নিখোঁজ জেলেদের পরিবারে পক্ষ থেকে জিডি করা হয়েছে।
ভোলা জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, 'এই জেলেদের সন্ধানে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি। সেইসঙ্গে তাদের পরিবারের জন্য আরও সহায়তা প্রয়োজন। আমরা সরকারের কাছে এই পরিবারগুলোকে আর্থিক সাহায্য করার অনুরোধ জানাই।'
সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, 'আমরা জেলেদের নিখোঁজের সংবাদ পেয়েছি। তারা এ সংক্রান্ত কাগজ জমা দিলে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবো।'
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান বলেন, 'আমরা নিখোঁজের তালিকা করে ইউনিয়ন পরিষদের জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এটি পাওয়া গেলে মৎস্য বিভাগ, প্রবাসী কল্যাণ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তারাই পুরো বিষয়টি মনিটরিং করবে।'
এই প্রক্রিয়া শেষ হতে বেশ সময় লাগবে এবং দুই মাসের বেশি সময় লাগতে পারে বলে জানান ইউএনও।
Comments