বেলারুশে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের সতর্ক প্রতিক্রিয়া

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেনকো ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচিত। ছবি: রয়টার্স
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেনকো ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচিত। ছবি: রয়টার্স

রাশিয়া তাদের প্রতিবেশী ও মিত্র দেশ বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ বার্তার মাধ্যমে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা দিয়ে সংঘাতের মাত্রা বাড়ানোর জন্য পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোকে সতর্ক করেন তিনি।

গতকাল শনিবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা গেছে, পুতিনের এই বার্তায় সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

পুতিনের বক্তব্যের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের ১ জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, এরকম কোনো নিশানা পাননি তারা।

যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে অস্ত্র মোতায়েন করছে—এই অজুহাত দিয়ে পুতিন বেলারুশে 'অস্ত্র' রাখার প্রসঙ্গের অবতারণা করেন। তবে তিনি জানান, বেলারুশে অস্ত্র রাখলেও তাদের কাছে তিনি এর নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করবেন না। এ উদ্যোগের মাধ্যমে ৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের পর এটাই প্রথম বারের মতো নিজ ভূখণ্ডের বাইরে কোথাও আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র মোতায়েন করতে যাচ্ছে রাশিয়া।

টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে পুতিন বলেন, 'এখানে অস্বাভাবিক কিছুই নেই। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েক দশক ধরে এটা করছে। তারা অনেকদিন ধরেই মিত্র দেশগুলোর ভূখণ্ডে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করে আসছে'।  

'আমরা একমত হয়েছি যে আমরাও একই কাজ করবো—এবং এ ক্ষেত্রে আমাদের নিজ নিজ বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করা হবে না। আমি আবারও জোর দিয়ে বলছি, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে যেসব আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেগুলো লঙ্ঘন করা হবে না', যোগ করেন পুতিন।

'কৌশলগত' পারমাণবিক অস্ত্র বলতে সেগুলোকে বোঝায়, যেগুলো কোনো একটি শহরকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়ার পরিবর্তে যুদ্ধক্ষেত্রে বিশেষ অর্জনের জন্য ব্যবহার হয়। তবে রাশিয়ার হাতে এ ধরনের কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তা অজানা। স্নায়ু যুদ্ধের আমলে অবলম্বন করা গোপনীয়তার কারণে এ সংখ্যা কখনোই প্রকাশ পায়নি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনাটি বেশ উল্লেখযোগ্য, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাশিয়াও এতদিন গর্ব করে দাবি করে এসেছে, যে তারা কখনো নিজ সীমান্তের বাইরে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, বেশ কিছুদিন ধরেই রাশিয়া ও বেলারুশ পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন বিষয়ে আলোচনা করছে।

২০২২ সালে পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন ব্যালিসটিক ক্ষেপণাস্ত্র 'সামরাতের' পরীক্ষা চালায় রাশিয়া। ছবি: রয়টার্স
২০২২ সালে পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন ব্যালিসটিক ক্ষেপণাস্ত্র 'সামরাতের' পরীক্ষা চালায় রাশিয়া। ছবি: রয়টার্স

তিনি বলেন, 'আমাদের নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গিতে এখনি কোনো পরিবর্তন আনার প্রয়োজন দেখছি না এবং রাশিয়া আদতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, এমন কোনো নিশানাও পাইনি। আমরা ন্যাটো জোটের সম্মিলিত প্রতিরক্ষা উদ্যোগের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ'।

পুতিন নিদিষ্ট করে জানাননি কবে অস্ত্রগুলো বেলারুশে পাঠানো হবে। তবে তিনি জানান, ১ জুলাইর মাঝে বেলারুশে একটি সংরক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ সমাপ্ত হবে।

পুতিন দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরেই বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেনকো তার দেশে রুশ অস্ত্র মোতায়েনের অনুরোধ জানিয়ে এসেছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে লুকাশেনকো কোনো মন্তব্য করেননি।

পুতিন বলেন, 'আমরা তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছি না। যুক্তরাষ্ট্রও এ কাজ করে না। আমরা মূলত তারা এক দশক ধরে যা করে আসছে, সেটাই করছি'।

'তাদের কিছু নিদিষ্ট দেশে মিত্র আছে, যেখানে তারা তাদের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়। আমরাও একই কাজই করবো', যোগ করেন পুতিন।

ইতোমধ্যে রাশিয়া বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ১০টি যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। পুতিন জানান, এছাড়াও বেলারুশে বেশ কিছু ইসকান্দার কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে, যেগুলো পারমাণবিক অস্ত্র ছুঁড়তে সক্ষম।

Comments

The Daily Star  | English

Ocean of mourners gather to pay tribute to Khaleda Zia

People from all walks of life arrive by bus, train and other modes of transport

2h ago