২ সপ্তাহের মধ্যে শেষ হতে পারে ইউক্রেন-যুদ্ধ?

ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠকে যোগ দেন ইউরোপের নেতারা। ছবি: Reuters
ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠকে যোগ দেন ইউরোপের নেতারা। ছবি: Reuters

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠকের মূল সূর ছিল কিয়েভের জন্য দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা।

ইউরোপের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে গতকাল সোমবারের বৈঠক সফল হয়েছে। ফলে, ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে জেলেনস্কির সঙ্গে রুশ নেতা পুতিনের শান্তি আলোচনার পথ সুগম হলো।

আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি, রয়টার্স, সিএনএন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম 

'খুব ভালো বৈঠক'

বৈঠক শেষে ট্রাম্প জানান, জেলেনস্কি ও ইউরোপের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে তার 'খুব ভালো' বৈঠক হয়েছে। তিনি বৈঠক শেষে পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন।

এই ঘটনাপ্রবাহে বিশ্লেষকরা ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আশা দেখছেন।

ট্রাম্প, জেলেনস্কি ও ইউরোপের নেতাদের বৈঠক। ছবি: রয়টার্স
ট্রাম্প, জেলেনস্কি ও ইউরোপের নেতাদের বৈঠক। ছবি: রয়টার্স

সব ঠিক মতো চললে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর এটাই হবে রাশিয়া-ইউক্রেনের শীর্ষ নেতাদের প্রথম ও সরাসরি বৈঠক।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরু হয়।

ট্রাম্প তার নিজস্ব সমাজমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেন, 'সবাই রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনায় উচ্ছ্বসিত।'

'বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ফোন করেছি। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে বৈঠকের আয়োজন শুরু করেছি। কোথায় এই বৈঠক হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি।'

ট্রাম্প জানান, দুই নেতার সাক্ষাতের পর তিনি ইউক্রেন ও রাশিয়ার নেতাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের আয়োজন করবেন।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস জানান, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করতে রাজি পুতিন। তবে সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষ এখনো বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।

পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে প্রস্তুত জেলেনস্কি

হোয়াইট হাউস থেকে বের হয়ে জেলেনস্কি জানান, তিনি পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিতে 'প্রস্তুত'।

অন্যদিকে, মস্কোয় ক্রেমলিনের এক সহকারী কর্মকর্তা জানান, ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে পুতিনের আপত্তি নেই।

পুতিন-জেলেনস্কি শেষবার যখন বৈঠক করেন, তখন জেলেনস্কির দাঁড়ি ছিল না এবং তিনি সব সময় স্যুট পরে থাকতেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
পুতিন-জেলেনস্কি শেষবার যখন বৈঠক করেন, তখন জেলেনস্কির দাঁড়ি ছিল না এবং তিনি সব সময় স্যুট পরে থাকতেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

গত শুক্রবার পুতিন-ট্রাম্পের বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্ত আসেনি। অনেকে বলেছেন, আলাস্কার ওই বৈঠক যেন 'পর্বতের মুসিক প্রসব'

তা সত্ত্বেও, বৈঠক শেষে ট্রাম্প বেশকিছু ইতিবাচক উদ্যোগ নেন এবং জানান, যুদ্ধবিরতি নয়, শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেন ট্রাম্প। ওই বৈঠকে যোগ দেন ইউরোপীয় নেতাদের 'ইচ্ছুকদের জোট'। এই জোটে আছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, ফিনল্যান্ড, ইউরোপীয় কমিশন ও ন্যাটো।

জেলেনস্কি-ট্রাম্পের ইতিবাচক সাক্ষাৎ

পাশাপাশি, ট্রাম্পের সঙ্গেও হোয়াইট হাউসে সরাসরি বৈঠক করেন জেলেনস্কি।

ঝগড়া-বিবাদ ও কার্যত জেলেনস্কিকে 'ঘাড় ধরে' বের করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও জেলেনস্কির বৈঠক ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

সেবার বারবার জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউসের বৈঠকের রীতি মেনে স্যুট পরে আসার অনুরোধ করা হলেও তিনি তা মানেননি

ট্রাম্প-জেলেনস্কির এবারের বৈঠক অনেক সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। ছবি: রয়টার্স
ট্রাম্প-জেলেনস্কির এবারের বৈঠক অনেক সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। ছবি: রয়টার্স

তবে এবার সেই ভুল করেননি জেলেনস্কি। সুসজ্জিত স্যুট পরে ওভাল অফিসে ঢোকেন তিনি।

জেলেনস্কি বলেন, এটাই ট্রাম্পের সঙ্গে তার 'সেরা' বৈঠক।

এবারের বৈঠকে জেলেনস্কির 'কালো জ্যাকেটের' প্রশংসাও করেছেন ট্রাম্প।

নিরাপত্তার নিশ্চয়তা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেনকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। পুতিন এতে সম্মতি দিলেও কিয়েভের ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা বা প্রস্তাবকে উড়িয়ে দেন তিনি।

ট্রাম্প জানান, 'ইউরোপের কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে ইউক্রেনকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে।'

ন্যাটো প্রধান মার্ট রুত্তে সাংবাদিকদের বলেন, 'ট্রাম্পের সঙ্গে অত্যন্ত সফল বৈঠক হয়েছে। এতে অচলাবস্থার নিরসন হবে।'

ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুত্তে। ছবি: রয়টার্স
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুত্তে। ছবি: রয়টার্স

'আজকের বৈঠকে মূলত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সংশ্লিষ্টতা বাড়াবে এবং আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিস্তারিত জানা যাবে।'

ফাইনানশিয়াল টাইমস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনার অঙ্গীকার করেছে ইউক্রেন। এই অস্ত্রের অর্থায়ন করবে ইউরোপের মিত্র দেশগুলো।

পরে জেলেনস্কি সাংবাদিকদের ৯০ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজের কথা বলেন। তিনি আরও জানান, আগামী ১০ দিনের মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ঠিক করা হবে।

তবে এখনো পুতিন ক্রিমিয়া উপদ্বীপ ও রাশিয়ার দখল করা ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলের দাবি ছাড়েননি।

এ বিষয়টি বাদ দিলে বলা যায়, অবশেষে যুদ্ধ বন্ধের উদ্দেশ্যে কিয়েভ-মস্কোর শান্তি আলোচনার মঞ্চ এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।

হয়তো আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দীর্ঘদিনের এই সংঘাতের অবসান হবে বলে আশা শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসীর।

Comments

The Daily Star  | English

Fugitives can’t run in national elections

The Election Commission has proposed stricter amendments to the election law, including a provision barring fugitives from contesting national polls.

9h ago