এবার আফগানদের সঙ্গে ২০০ রানে হারল বাংলাদেশ

আগেই সিরিজ নিশ্চিত না হলে, হয়তো একাদশেই জায়গা হতো না বিলাল সামির। অথচ সেই অনিশ্চিত ক্রিকেটারই ধসিয়ে দিলেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। সঙ্গে ছিলেন দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ স্পিন সেনানী রশিদ খান। দু'জনের বিধ্বংসী বোলিংয়ে একশ রানও পেরোতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে আফগানিস্তানের কাছে এক বিব্রতকর পরাজয়ের স্বাদ নিয়ে সিরিজ শেষ করল টাইগাররা, নিশ্চিত হলো ধবলধোলাইও।

আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ২০০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে আফগানিস্তান। দেশের বাইরে এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম হার, এ পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে এর চেয়ে বড় ব্যবধানে হারের রেকর্ড রয়েছে মাত্র তিনটি। ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৯৩ রান তোলে আফগানরা। জবাবে ব্যাট হাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বাংলাদেশ ২৭.১ ওভারে গুটিয়ে যায় মাত্র ৯৩ রানে।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে বাংলাদেশের ব্যাটারদের পারফরম্যান্স ছিল একেবারে হতাশাজনক। সাইফ হাসান ছাড়া কেউই দাঁড়াতে পারেননি আফগান বোলারদের সামনে। শুরুতে কিছুটা লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিলেও, ধীরে ধীরে পুরো দল ভেঙে পড়ে। ওপেনিংয়ে সাইফের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ৩৫ রানের ওপেনিং জুটি এলেও, নাঈম শুরু থেকেই ভুগছিলেন। ২৪ বলে মাত্র ৭ রান করে আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে আউট হন তিনি।

এরপর একের পর এক ব্যাটার ফেরেন সাজঘরে। সাবেক অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আবারও ব্যর্থ হন, তাওহিদ হৃদয় রশিদের গুগলি বুঝতে না পেরে বোল্ড হন, আর টানা দুই বলে ফেরেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ও শামিম হোসেন পাটোয়ারি। বাকি ব্যাটাররাও আনাড়ি শট খেলে উইকেট বিলিয়ে আসেন। সাইফ হাসান একমাত্র ব্যাটার যিনি দুই অঙ্ক ছুঁতে পেরেছেন। তার ব্যাটে আসে ৫৪ বলে ৪৩ রান, যেখানে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছক্কা।

আফগানিস্তানের হয়ে বিলাল সামি ছিলেন একেবারে আগুনে ফর্মে। মাত্র ৩৩ রানের বিনিময়ে ৫টি উইকেট তুলে নিয়ে ধস নামান বাংলাদেশের ইনিংসে। তাকে দারুণভাবে সহায়তা করেন রশিদ খান, যিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট। তাদের দু'জনের দুর্দান্ত বোলিংয়েই বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ কার্যত ভেঙে পড়ে।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন দেখান। তাদের ব্যাটে আসে সৌন্দর্য, আত্মবিশ্বাস ও পরিপক্বতা। শতরানের জুটি গড়ার আগেই, ৯৯ রানে ভাঙে তাদের পার্টনারশিপ। তানভিড় ইসলামের এক নিখুঁত ডেলিভারিতে এলবিডাব্লিউ হয়ে ফেরেন গুরবাজ ৪২ রানে। তবে গুরবাজের বিদায়ে আফগানদের অগ্রযাত্রা থামেনি। তিনে নামা সেদিকুল্লাহ আতল ইব্রাহিমকে দারুণভাবে সঙ্গ দেন। দু'জন মিলে ৭৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলের পুঁজি বড় করেন।

তখন বল হাতে আসেন সাইফ হাসান, আর সেখানেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। প্রথম ওভারেই সেদিকুল্লাহকে তুলে নেন তিনি। দ্বিতীয় ওভারে ফেরান অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদিকে, আর তৃতীয় স্পেলে বিদায় দেন ইকরাম আলীখিলকে। মাত্র ৪ ওভারে ৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে তিনি সৃষ্টি করেন সম্ভাবনার আলো। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, এমন দুর্দান্ত স্পেলের পরও অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ তাকে আর বল হাতে ডাকেননি।

এর কিছু পর রান আউট হয়ে ফেরেন ইব্রাহিম জাদরান। ১১১ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজানো তার ৯৫ রানের ইনিংসটি শেষ হয় হতাশার সঙ্গে। তখন মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরে এসেছে, কিন্তু নাটকীয়তা তখনও বাকি ছিল।

৪৯তম ওভারে ইনজুরিতে পড়েন পেসার নাহিদ রানা, দুই বলের বেশি করতে পারেননি তিনি। বাধ্য হয়ে বল হাতে নেন অধিনায়ক মিরাজ নিজেই, আর তখনই ম্যাচের গতি পুরোপুরি বদলে দেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি। ওভারের বাকি চার বলেই হাঁকান তিনটি ছক্কা, ওভার থেকে আসে ২৫ রান। শেষ ওভারে হাসান মাহমুদের ওপর আরও তাণ্ডব চালিয়ে নেন ১৯ রান। ফলে আফগানিস্তানের ইনিংস শেষ হয় ২৯৩ রানে, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের জন্য অজেয় পাহাড়ে পরিণত হয়।

নবির ব্যাটে আসে ৩৭ বলে ৬২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস, যেখানে ছিল ৪টি চার ও ৫টি ছক্কা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেন ইব্রাহিম জাদরান, ১১১ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৯৫ রান।

শেষ পর্যন্ত ২০০ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই নিশ্চিত করে আফগানিস্তান। অন্যদিকে ব্যাটিং ব্যর্থতায় মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশ। পুরো সিরিজজুড়েই যেন আত্মবিশ্বাসহীনতা, অস্থিরতা আর অসংযত শট নির্বাচনের শিকার ছিল টাইগাররা।

Comments

The Daily Star  | English

Vegetable prices skyrocket as erratic rain ravages croplands

Consumers and farmers are bearing the brunt of the radical shift in weather patterns as crops are damaged and retail prices skyrocket.

14h ago