আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করলেও স্বচ্ছতায় ঘাটতি বিসিবির
নতুন মৌসুম সামনে রেখে এবার আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর নিয়ম বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু আসলেই কি তা হচ্ছে? কারণ লিগের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা যতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, সততা ও সুনাম পুনরুদ্ধারের বিষয়টি ততটা অগ্রাধিকার পায়নি বলেই মনে করছেন অনেকেই।
বৃহস্পতিবার বিসিবি ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী আসন্ন দ্বাদশ আসরে অংশ নেবে পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। গত মৌসুমে অংশ নেওয়া ছয় দলের মধ্যে এবার থাকবে কেবল দুইটি -ঢাকা ক্যাপিটালস ও রংপুর রাইডার্স। তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন তিন দল -চট্টগ্রাম রয়্যালস, রাজশাহী ওয়ারিয়র্স এবং সিলেট টাইটান্স।
এ মৌসুমে অংশ নেওয়া প্রতিটি দল ইতোমধ্যে দুই কোটি টাকা করে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি জমা দিয়েছে, এবং আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে আরও দশ কোটি টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে জমা দিতে হবে।
গত মৌসুমে বোর্ড সব দলের কাছ থেকে ব্যাংক গ্যারান্টি নেয়নি, শুধুমাত্র চ্যাম্পিয়ন ফর্চুন বরিশাল তিন কোটি টাকা জমা দিয়েছিল। মৌসুম শুরু হওয়ার পরই বোর্ড বুঝতে পারে, এই সিদ্ধান্ত ছিল ভুল।
তখন অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজির খেলোয়াড়েরা অভিযোগ করেন যে তাদের পারিশ্রমিক বকেয়া পড়ে আছে। সবচেয়ে বড় সমস্যায় ফেলে 'দুর্বার রাজশাহী', যাদের বিদেশি খেলোয়াড়েরা দৈনিক ভাতা না পাওয়ায় ম্যাচ বর্জন করেন। 'চিটাগং কিংস'-এর মালিক তো লিগের মাঝামাঝি সময়ে বোর্ডের ডাকা জরুরি বৈঠকেও হাজির হননি।
ফলস্বরূপ, এই দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি আর নেই এবারের আসরে। বোর্ড এবার যাচাই-বাছাইয়ে অনেক কঠোর হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইফতেখার রহমান মিঠু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর যাচাই-বাছাইয়ে পুরো প্রক্রিয়া মেনে চলেছি। গত মৌসুমে দুটি বড় সমস্যা ছিল -এক, খেলোয়াড়দের পাওনা বকেয়া থাকা; আর তাই এবার আমরা ১০ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি নিচ্ছি।'
আগামী বিপিএলে প্রথমবারের মতো মুনাফা ভাগাভাগি পদ্ধতি চালু হচ্ছে। বিসিবি তাদের মোট লাভের ৩০ শতাংশ ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে ভাগ করে দেবে। তবে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি যদি খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক দিতে ব্যর্থ হয়, সেই অংশের অর্থ বোর্ড নিজের কাছে রেখে খেলোয়াড়দের বকেয়া পরিশোধে ব্যবহার করবে।
তবে, গত আসর জুড়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে লিগের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ওই ঘটনার পরই বিসিবি ফেব্রুয়ারিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে কমিটি অক্টোবরের শেষদিকে প্রায় ৯০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, যেখানে খেলোয়াড়, সাপোর্ট স্টাফ এবং আরও কয়েকজনের নাম রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সন্দেহ করা হচ্ছে।
তবে বিসিবি সেই প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করে সেটি হস্তান্তর করেছে আলেক্স মার্শালের কাছে, যিনি নবগঠিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ইন্টিগ্রিটি ইউনিটের (বিসিবিআইইউ) প্রধান এবং বর্তমানে তদন্ত পরিচালনা করছেন।
একজন বিসিবি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'ওই তিন সদস্যের কমিটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং সন্দেহভাজন খেলোয়াড়দের একটি তালিকা তৈরি করেছে। মার্শাল তদন্ত শেষ করে নিজের মতামত জানাবেন। এরপর আরও তদন্ত হবে, প্রমাণ সংগ্রহ করা হবে। আপাতত কোনো প্রমাণ নেই, কেবল সন্দেহভাজনদের একটি তালিকা আছে।'
সূত্র জানায়, ওই ৯০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের একমাত্র তাৎক্ষণিক প্রভাব হবে, সন্দেহভাজন খেলোয়াড়দের এবার আরও ঘনিষ্ঠভাবে নজরদারিতে রাখা হবে।
বিসিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, বোর্ড 'পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত' কোনো নাম প্রকাশ করবে না, কারণ 'অপরাধে জড়িত না থেকেও সন্দেহভাজনদের প্রকাশ করলে তারা অপ্রয়োজনে চাপে পড়ে যাবে।'
তবে বিসিবি যদি সন্দেহভাজনদের নাম প্রকাশ না করে তাদের খেলতে দেয়, তাহলে বিপিএলের সততা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে -এক সময় যখন লিগটির মর্যাদা পুনরুদ্ধারই সবচেয়ে জরুরি। ঠিক যেমন ব্যাংক গ্যারান্টি না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে গতবার অনুতপ্ত হয়েছিল বিসিবি, এবারও সেই ভুল পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।


Comments