বিফলে রানার হ্যাটট্রিক, শেষ বলের রোমাঞ্চে মিরাজদের জয়
২৭ বলে দরকার ২৭ রান, হাতে ৭ উইকেট। সিলেট টাইটান্সের জন্য এই সহজ সমীকরণ ভীষণ কঠিন হয়ে গেল পারভেজ হোসেন ইমন ও মেহেদী হাসান মিরাজের ৬৬ বলে ৮৩ রানের জুটি ভাঙায়। ১৮তম ওভারে মেহেদী হাসান রানা হ্যাটট্রিক পূর্ণ করলে খাদের কিনারা থেকে উঠে চালকের আসনে বসে পড়ল নোয়াখালী এক্সপ্রেস। কিন্তু নাটকীয়তা বাকি ছিল আরও অনেক। ঘটনাবহুল শেষ ওভারে ১৩ রানের সমীকরণ মিলিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় তুলে নিল সিলেট।
বিপিএলে পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা শনিবারের দ্বিতীয় ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে স্বাগতিকরা। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নোয়াখালীর বিপক্ষে ১ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে তারা। আসরে দুই ম্যাচ খেলে এটি তাদের প্রথম জয়। সমান ম্যাচে এখনও জয়ের স্বাদ পায়নি নোয়াখালী। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪৩ রান করে তারা। জবাবে পুরো ওভার খেলে ৯ উইকেটে ১৪৪ রান তুলে সিলেট পৌঁছায় লক্ষ্যে।
ম্যাচের শেষ ওভারে মিডিয়াম পেসার সাব্বির হোসেন প্রথম দুটি বল দেন ডট। সমীকরণ দাঁড়ায় ৪ বলে ১৩ রান। এরপর কোমরের উপরে ফুল টস করায় নো বলের সিদ্ধান্ত আসে আম্পায়ারের পক্ষ থেকে। ফ্রি হিটে ছক্কা হাঁকানোর পর চার মেরে খেলা মুঠোয় নিয়ে আসেন ইথান ব্রুকস। তবে পঞ্চম বলে উইকেটরক্ষক জাকের আলী অনিকের সরাসরি থ্রোতে তিনি রানআউট হয়ে গেলে উত্তেজনা যেন আকাশ ছুঁয়ে ফেলে। শেষমেশ ১ বলে ২ রানের সমীকরণ মেলে সাব্বিরের দেওয়া ওয়াইড এবং শেষ বলে লেগ বাই থেকে পাওয়া রানের কল্যাণে।
ব্যাটিংয়ে নেমে নোয়াখালীর শুরুটা হয় চূড়ান্ত বাজে। মাত্র ৯ রানের মধ্যে তারা হারায় ৩ উইকেট। মাজ সাদাকাত, হাবিবুর রহমান সোহান ও হায়দার আলী— তিনজনই ফেরেন শূন্যতে। চাপের মুখে একপ্রান্ত আগলে দলকে টানেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। সর্বোচ্চ ৬১ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৫১ বল মোকাবিলায় মারেন একটি চার ও তিনটি ছক্কা। সাতে নামা জাকের আলী অনিক চারটি চারের সাহায্যে আগ্রাসী ঢঙে ১৭ বলে ২৯ রান করলে লড়াইয়ের পুঁজি মেলে নোয়াখালীর। খোলসে থাকা অধিনায়ক সৈকত আলী ২৪ রান করতে লাগান ২৯ বল।
সিলেটের হয়ে ডানহাতি পেসার খালেদ আহমেদ ৪ উইকেট নিয়ে ছিলেন সবচেয়ে সফল বোলার। নিয়ন্ত্রিত থেকে ৪ ওভারে একটি মেডেনসহ ২৩ রান খরচ করেন তিনি। তার হাতেই ওঠে ম্যাচসেরার পুরস্কার। এছাড়া, সাইম আইয়ুব দুটি ও মোহাম্মদ আমির একটি শিকার ধরেন। ওভারের কোটা পূর্ণ করার পথে দুজনই দেন সমান ২৫ রান।
৪ ওভারে ৩৪ রানের বিনিময়ে খালেদের মতো ৪ উইকেট পেলেও নোয়াখালীর রানাকে মাঠ ছাড়তে হয় হতাশা নিয়ে। বিফলে যায় এই বাঁহাতি পেসারের হ্যাটট্রিক। সমান ওভারে মাত্র ১৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে হাসান মাহমুদ তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলেও লাভ হয়নি। একটি করে চার ও ছক্কায় ব্রুকসের ১৩ বলে ১৬ রানের আগে সিলেটকে অনায়াস জয়ের সুবাস দেন পারভেজ। তিনি ৪১ বলে ৬০ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলেন ছয়টি চার ও দুটি ছক্কায়। অধিনায়ক মিরাজের ব্যাট থেকে ৩৩ রান আসতে লাগে ৩৭ বল।
রান তাড়ায় সিলেটও শুরুতে বিপাকে ছিল। ৩৪ রানের মধ্যে পড়ে যায় ৩ উইকেট। সাইম রানের খাতা খুলতে পারেননি। টিকতে পারেননি রনি তালুকদার ও জাকির হাসান। পারভেজ ও মিরাজের চাপ এড়ানো সেই জুটি থামলে আবার ঘটে ছন্দপতন। ১৬তম ওভারে পারভেজ বোল্ড হওয়ার পরের ওভারে আফিফ হোসেন বিদায় নেন দ্রুত। এরপর টানা তিন বলে মিরাজ, নাসুম আহমেদ ও খালেদকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক করেন রানা। তবে নোয়াখালীর আশা মাড়িয়ে সবশেষে সিলেট পায় জয়ের হাসি।

Comments