চার নম্বরের চ্যালেঞ্জে ইমন: এই ‘সাহসী’ সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে কাজে দেবে?

ছবি: সিলেট টাইটান্স

বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে পারভেজ হোসেন ইমন সাধারণত ওপেনার হিসেবেই খেলেছেন। তবে বর্তমান স্কোয়াডের টপ-অর্ডারে ওপেনারের ছড়াছড়ি থাকায় আগামী আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাকে দেখা যেতে পারে নতুন পজিশনে।

চলমান বিপিএলে সিলেট টাইটান্স ইমনকে চার নম্বরে ব্যাট করার দায়িত্ব দিয়েছে। ২৩ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটার প্রথম দুই ম্যাচেই হাফসেঞ্চুরি করে এই সিদ্ধান্তের ইতিবাচক প্রভাব দেখিয়েছেন। তবে প্রশ্ন উঠছে— তার সহজাত ব্যাটিংয়ের সঙ্গে ভবিষ্যতে এই পজিশনটি কতটা মানানসই হবে?

আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে ইমন ৩৩ বলে অপরাজিত ৬৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন। নতুন ভূমিকায় তিনি যখন ক্রিজে যান, তখন সিলেটের ইনিংসের নবম ওভার চলছিল। একজন ওপেনারের জন্য পুরনো বা নরম হয়ে যাওয়া বলে শুরু করা সব সময় আরামদায়ক হয় না। তবে দিনের আলোয় মন্থর উইকেটে এবং পরের ম্যাচে (নোয়াখালী এক্সপ্রেসের বিপক্ষে ৪১ বলে ৬০ রান) ফ্লাডলাইটের নিচে যেভাবে তিনি মানিয়ে নিয়েছেন, তা আশাব্যঞ্জক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইমনের ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আপনি যখন কোনো নতুন কিছু শুরু করবেন, শুরুতেই স্বস্তি পাবেন না। বিশেষ করে, দিনে ও রাতে ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে কৌশলগত পার্থক্য থাকে। সেখানে মানিয়ে নিতে পারাটা ভালো দিক। আমি খুশি যে, নিজের পজিশন ত্যাগ করে অন্য জায়গায় ব্যাট করার সাহস ইমন দেখিয়েছে।'

প্রথম ম্যাচে ফিফটি করার পর ইমন জানিয়েছিলেন, তিনি যে কোনো ভূমিকায় খেলতে প্রস্তুত। তার মতে, ওপেনিংয়ে তিনি 'সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য' বোধ করলেও চার নম্বরে ব্যাট করা তাকে 'নিজেকে যাচাই ও প্রমাণ করার' সুযোগ দিচ্ছে।

সিলেটের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখেই ফ্র্যাঞ্চাইজিটির হয়ে ইমনকে চারে ব্যাটিংয়ের 'সুযোগ' দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের হয়ে খেলা ৩০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্যে ২৮ বারই ওপেনিংয়ে নেমেছেন ইমন। চারে খেলেছেন মাত্র একবার— আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজের শেষ ম্যাচে। দলে তানজিদ হাসান তামিম ও সাইফ হাসানের মতো ওপেনার থাকায় বাকিদের অন্য পজিশনে পরখ করার আলোচনা চলছিল, যার প্রতিফলন দেখা গেছে ওই ম্যাচে।

এই প্রসঙ্গে নির্বাচক হাসিবুল হোসেন শান্ত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের পরিকল্পনা ছিল যে, ইমন যেহেতু চারে ব্যাট করতে পারে, তাই সাইফ ওপেন করলে সে অনায়াসেই চারে খেলতে পারবে। কারণ আমার মনে হয়েছে, সাইফ চার নম্বরে অতটা স্বচ্ছন্দ নয়।'

তিনি আরও জানান, সিলেট দলে ইমনের বর্তমান ব্যাটিং পজিশন নিয়ে তার সঙ্গে ইতোমধ্যে কথা বলেছেন, 'সবাই দেখতে পাচ্ছে চারে সে স্বচ্ছন্দ। আমি তাকে বলেছি, "দেখো, তুমি টি-টোয়েন্টিতে চার নম্বরে রান পাচ্ছ।" সে সেটা মেনে নিয়েছে। সে যদি এখানে সফল হয়, তবে তাকে আর ওপেনিংয়ে ফিরে যেতে হবে না।'

শান্ত অবশ্য দাবি করেন যে, জাতীয় দলের নির্বাচকরা ইমনকে চারে খেলানোর জন্য সিলেটের ফ্র্যাঞ্চাইজিকে কোনো নির্দেশনা দেননি। তবে 'হয়তো বোর্ডের কেউ বলে থাকতে পারেন' বলে উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি স্পষ্ট করেন যে, ইমনের এই ভূমিকাটি এখনও চূড়ান্ত কিছু নয়।

ইমনের মানিয়ে নেওয়ার এই ক্ষমতা তাকে চার নম্বরে থিতু করতে পারে কিনা তা নির্ভর করবে সিলেটের হয়ে এই পজিশনে তিনি আরও কতগুলো ইনিংস খেলার সুযোগ পান সেটার ওপর। মাঝের ওভারগুলোতে স্পিন সামলাতে কব্জির মোলায়েম কাজ তিনি কতটা রপ্ত করতে পারেন, সেটাও নজরে রাখতে হবে। এসবের ওপরই বিপিএল ও আসন্ন টুর্নামেন্টগুলোতে তার সাফল্য নির্ভর করবে। তবে এই পরিবর্তনের ভিড়ে তার সহজাত আক্রমণাত্মক খেলা হারিয়ে যায় কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Comments