বড় শটের জন্য চাই বড় চিন্তা
এতো এতো পাওয়ার হিটিং কোচিংয়ের পর কেবল এক ছক্কা! শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর টিপ্পনী কেটে বলছিলেন এক বিদেশী সাংবাদিক। ওই ম্যাচে বাংলাদেশের গোটা ইনিংসে কেবল এক ছক্কা বোঝাচ্ছিলো বেহাল দশা। এশিয়া কাপের প্রস্তুতির সময় পাওয়ার হিটিং নিয়ে আলাদা ক্যাম্প আয়োজন করে বিসিবি। জুলিয়ান উডের অধীনে চলে সেই সেশন। তবে এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের সবগুলো ম্যাচ খেলে হিটিং এভিলিটির উন্নতি দেখা গেল না বাংলাদেশের খেলায়, বরং নতুন করে তৈরি হয়েছে সংশয়।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের ইনিংসের তখন ১৯তম ওভার। আফগান পেসার আজমতুল্লাহ ওমরজাইর টানা তিনটি বল ব্যাট লাগাতে পারলেন না জাকের আলি অনিক। শেষ ওভার পর্যন্ত চলল তার ভোগান্তি।
জাকেরের এই ভোগান্তি দূর থেকে দেখেছেন কদিন আগে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করা পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উড। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি জানালেন সমস্যা ধরে জাকেরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি, 'আমি জাকের আলির সঙ্গে কথা বলেছি এবং খেলা শেষে তাকে মেসেজও করেছি। আমি তাকে বলেছি আমার মনে হয়েছে শেষ ক'টা ওভারে সে বলটা অতিরিক্ত জোরে মারার চেষ্টা করছিল। সে খুব জোরে সুইং করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, শেপও হারিয়েছে। অথচ ইনিংসের শেষভাগে সে অবশ্যই ভয়ংকর হতে পারে, তবে সেটা করতে হবে সংগঠিতভাবে।'
দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচটা পরে বাংলাদেশ জিতে নিলেও স্লগ ওভারে ছক্কার ঘাটতি সেদিন হতে পারত বিপদের কারণ। পাওয়ার প্লেতে দশের উপর রান তোলা বাংলাদেশ শেষ পাঁচ ওভারে নিতে পারে স্রেফ ৩৫ রান। শেষ ৪৭ বলে আসেনি কোন ছয়!
টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে ছক্কা মারার হারে দশে অবস্থান বাংলাদেশের। ২০০৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইনিংস প্রতি ৩.৮ টা ছক্কা মারার হার ছিলো বাংলাদেশ। যা টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে ছিলো সবচেয়ে বাজে। ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালে এই জায়গায় আসে উন্নতি। ৬.১ টা করে ছক্কা মারে বাংলাদেশ এই সময়ে প্রতি ইনিংসে।
তবে এশিয়া কাপে তিন ম্যাচে ৮টা ছক্কা মানে বাংলাদেশের ছক্কা মারার হার নেমে হয়েছে ২.৬৭। পাওয়ার হিটিং নিয়ে কাজ করার পর দেখা যাচ্ছে এটা আবার উল্টো স্রোতে!
উড বললেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পিচের একটা প্রভাব কাজ করে থাকতে পারে এতে, 'এর পেছনে উইকেটও কিছুটা ভূমিকা রেখেছে। পিচগুলো শুকনো আর খুব ধীর। পেসাররা প্রচুর অফ-পেস বল করছে, তাই বিশাল রান উঠছে না। এখানে ইংল্যান্ডের মত দলকে ৩০০ করতে দেখবেন না। আমার মনে হয় গড়ে ১৮০-ই সম্ভবত জয়ের স্কোর।'
তাই বলে লঙ্কানদের বিপক্ষে স্রেফ এক ছক্কার ব্যাখ্যা কি? উড এই জায়গায় বলছেন, ' আমার মনে হয়েছে শ্রীলঙ্কা দারুণ বোলিং করেছে এবং সবকিছু নিখুঁতভাবে করেছে। পাওয়ার প্লের প্রথম দুই ওভারে তারা দুটি উইকেট মেডেন নিয়েছিল, যা বিশাল ব্যাপার। এই ফরম্যাটে পাওয়ার প্লে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, আবার মাঠও বড়। আমার বিশ্বাস ইনিংস সাজানোর জন্য পাওয়ার প্লেতেই বড় আক্রমণ চালাতে হয়। তাই শ্রীলঙ্কা ওদের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করেছে।'
মুশকিল হচ্ছে মাঠ বড়, উইকেট মন্থর থাকা সব দলের জন্যই সমান। বাকিদের অবস্থা বাংলাদেশের মতন নয়। গ্রুপে তিন ম্যাচের সবগুলো খেলে বাংলাদেশ মেরেছে ৮ ছক্কা। প্রথম দুই ম্যাচেই শ্রীলঙ্কা মেরেছে ৯ ছক্কা, আফগানিস্তান দুই ম্যাচে মেরেছে ১৯ ছক্কা।
আফগানদের বিপক্ষে খেলা দেখে উডের মনে হয়েছে কিছুটা প্যানিকড হয়ে পড়েছিলেন টাইগার ব্যাটাররা। ভালো শুরুর পরও তাদের ১৬০ রানের ভেতর আটকে থাকা মানসিকতার ঘাটতি হিসেবে দেখছেন তিনি, 'আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশ একটু আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। তারা অতিরিক্ত জোরে মারতে যাচ্ছিল এবং অতিরিক্ত সুইং করছিল; কিছুটা প্যানিকড হয়ে পড়েছিল। আমার মনে হয় বাংলাদেশ দল হিসেবে ১৬০-১৭০ রান করার মানসিকতায় আছে। তাদের এটা বদলাতে হবে, লক্ষ্য রাখতে হবে ২০০। যদি ২০০-এর লক্ষ্য স্থির করো, উইকেট ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে হয়তো ১৮০ হবে। কিন্তু যদি ১৫০-১৭০-এর জন্য নামো, তবে ১৬০-এর বেশি হবে না। তোমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে সর্বোচ্চ সম্ভাব্য রান।.'
উড সাহসী অভ্যাস গড়ে না উঠার বড় জায়গা চিহ্নিত করেছেন। নিরাপদ ক্রিকেট খেলতে গিয়ে ছোট দলের বিপক্ষেও বাংলাদেশ খেলে ভয়ে ভয়ে। এই জায়গায় চ্যালেঞ্জ নিতে বলছেন তিনি, ' আমি তাদের সঙ্গে ক'সপ্তাহ কাজ করেছি। ওদের দক্ষতা ও পাওয়ার আছে। তবে কোচিং স্টাফদের কাছ থেকে বারবার একই মেসেজ যাওয়া দরকার। বড় দলের সঙ্গে খেলতে গেলে ভীরু বা লাজুক হওয়া যাবে না। যদি ছোট লক্ষ্য তাড়া করো, যেমন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে করেছিলাম, সেটা ১০ ওভারে শেষ করার চেষ্টা করা উচিত। ১০০ রান তাড়া করতে হলে ১০ ওভারের মধ্যেই জিততে হবে। খেলার অর্ধেকের সময় বসে বলতে হবে—'ঠিক আছে, ইংল্যান্ড হলে এমনটাই করত'। নিজেদের চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে। আমার একমাত্র উদ্বেগ হলো, এটা বাস্তবে ঘটে না।'


Comments