‘সাঙ্গাকারাকে অনুসরণ করতাম, সাকিব ভাইকেও ভালো লাগত’

দুই ফিল্ডারের মাঝ গলিয়ে দারুণ কাট শট, এক পা এগিয়ে চোখ ধাঁধানো ফ্লিক। প্রতিটি শটেই প্রকাশিত হচ্ছে আত্মবিশ্বাস আর সৌন্দর্য। বাংলাদেশ নারী দলের কোন ব্যাটারের চোখ জুড়ানো এমন ব্যাটিং সচরাচর দেখা যায় না। বাঁহাতি ব্যাটার রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক যেন এদিক থেকে ব্যতিক্রম। পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অভিষেকেই রান তাড়ায় ফিফটি করে নজর কেড়েছেন তিনি। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে জানালেন নিজের পথচলার গল্প।
অভিষেকেই আলো ছড়ালেন। আপনার কাছে এটা কতটা অর্থবহ?
রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক: এত বড় মঞ্চে অভিষেক ক্যাপ পাওয়া ছিল ভিন্নরকম অনুভূতি। আমি উত্তেজিত ছিলাম, তবে জানতাম দলকে জেতাতে অবদান রেখেই এটিকে স্মরণীয় করে তুলতে হবে। আমি কোনো চাপ নিইনি, বাড়তি কিছু ভাবিনি, শুধু মনোযোগ দিয়েছি ম্যাচ শেষ করার দিকে।
১৩০ রান তাড়া করার সময় আপনার মনে কী চলছিল?
ঝিলিক: আমরা জানতাম উইকেটে মুভমেন্ট আছে এবং তাদের দু'জন মানসম্পন্ন পেসার আছে। তাই [ফারজানা হক] পিঙ্কি আপু আর আমি পরিকল্পনা করেছিলাম প্রথম ১০ ওভারে উইকেট না হারিয়ে ৩০-৩৫ রান করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি আউট হয়ে গেলেন, এরপরই [শারমিন আক্তার] সুপ্তা আপুও আউট হয়ে যান। যখন তাদের স্পিনাররা এলো, তখন অধিনায়ক [নিগার সুলতানা] জ্যোতি আর আমি আলাদা বোলারকে লক্ষ্য করার পরিকল্পনা করি। আমি বললাম আমি বামহাতি স্পিনার [নাশরা সান্ধু]-কে খেলব, আর তিনি অফ-স্পিনার [রামিন শামীম]-কে টার্গেট করবেন। দুই ওভারে আমরা দুজনেই তিনটি করে বাউন্ডারি মারি, আর সেটাই আমাদের সাহায্য করেছে।
হঠাৎ দলে অন্তর্ভুক্তি, মূলত ব্যাকআপ ওপেনার ও উইকেটকিপার-ব্যাটার হিসেবে দলে নেওয়া—এত বড় মঞ্চে কি চাপ অনুভব করেছিলেন?
ঝিলিক: যদি এটা আগে ঘটত, তাহলে হয়তো চাপ অনুভব করতাম। কিন্তু এখন আমি খেলা খুব উপভোগ করি। কোনো নেতিবাচকতা চাই না, আর আমি মনে করি এমন চ্যালেঞ্জ সামলানোর আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। আমার মনোযোগ শুধু নিজের কাজ করার দিকে।
বাংলাদেশের নারী দলে বাঁহাতি ব্যাটার খুব বেশি নেই। আপনার বাঁহাতি ব্যটার হওয়ার কোন গল্প আছে?
ঝিলিক: আমি যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করি, তখন স্বাভাবিকভাবেই বাঁহাতি ব্যাটিং করতাম। আমি [কুমার] সাঙ্গাকারার ব্যাটিং ভীষণ পছন্দ করতাম এবং তাকে অনেক অনুসরণ করেছি। আমি সাকিব [আল হাসান] ভাইয়ের ব্যাটিংও পছন্দ করি।
আমাদের দেশে ২৮ বছর বয়সে খুব কম খেলোয়াড়ই অভিষেক করে। এতদিন পরও জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার জন্য আপনাকে কী প্রেরণা যুগিয়েছে?
ঝিলিক: ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে একাধিক ইনজুরিতে পড়েছি, যা আমাকে পিছিয়ে দিয়েছে। ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে আমি দলে নির্বাচিত হয়েছিলাম, কিন্তু ইনজুরির কারণে বাদ পড়ি। হংকংয়ে একটি ইমার্জিং দলের সিরিজ চলাকালে আমার এসিএল ছিঁড়ে যায়, ফলে এক বছরেরও বেশি সময় খেলতে পারিনি। ইনজুরির ধাক্কা সত্ত্বেও সবসময় ভেবেছি আমি হাল ছাড়ব না এবং আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন পূরণ করতে।
এই টুর্নামেন্টে আপনার লক্ষ্য কী? আর জয়ের পর ড্রেসিংরুমের পরিবেশ কেমন?
ঝিলিক: ড্রেসিংরুমের পরিবেশ খুবই ইতিবাচক। পারফরম্যান্স যেমনই হোক, সবাই একে অপরকে সমর্থন করে। আমরা ম্যাচ ধরে ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি, প্রতিপক্ষকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিচ্ছি না, তাই চাপ বোধ করছি না। আমি মনে করি, পরবর্তী প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার আগে আমাদের শান্ত থাকা দরকার। ইনশাআল্লাহ, আমাদের লক্ষ্য সেমিফাইনালে ওঠা। ব্যক্তিগত লক্ষ্য হিসেবে আমি সেটা নিজের মধ্যেই রাখতে চাই।
Comments