জুলাইয়ে চোখ হারিয়েও অদম্য শুভ, লড়বেন চাকসু নির্বাচনে

মো. শুভ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

চোখে আর আলো নেই। আগের মতো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরাও সম্ভব নয়। এক বছর ধরে চোখের ভেতর বয়ে বেড়াচ্ছেন বুলেট। প্রতিদিনের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে অসহনীয় যন্ত্রণা।

তবু থেমে যাননি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. শুভ হোসেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চোখ হারানো শুভ এখন লড়ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে।

সমাজসেবা ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। ১২ অক্টোবর এই নির্বাচন ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ। বিভিন্ন প্যানেল প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুরে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন শুভ। সেদিন ছাত্রলীগের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। বুলেটটি তার ডান চোখ ভেদ করে তিন স্তর অতিক্রম করে ভেতরে আটকে যায়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা চক্ষু ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নেওয়া হলেও চোখ আর ফেরেনি। এখনো সেই বুলেটটি তার চোখের ভেতর রয়ে গেছে, যা তাকে প্রতিনিয়ত যন্ত্রণার মুখোমুখি করছে।

ভাঙা স্বপ্ন, নতুন পথ

শুভর শৈশবের স্বপ্ন ছিল পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেওয়া। কিন্তু চোখ হারানোর পর সে স্বপ্ন ভেঙে যায়। তবে ভগ্নস্বপ্নের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে তিনি খুঁজে নিয়েছেন নতুন স্বপ্নের পথ। প্রতিষ্ঠা করেছেন 'দৃষ্টিদান' নামে একটি সংগঠন—যা মানবাধিকার, শিক্ষা ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে।

ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এই সংগঠন। শুভর পরিকল্পনা রয়েছে ৬৪ জেলায় কমিটি গঠন করার।

সাধারণ পরিবার থেকে আন্দোলনের মঞ্চে

লক্ষ্মীপুর সদরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম শুভর। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবচেয়ে ছোট। একজন ভাই আইনজীবী, আরেকজন ব্যাংক কর্মকর্তা। ভবানীগঞ্জ বহুমুখী বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর এইচএসসি শেষ করেন অক্সফোর্ড মডেল কলেজ, লক্ষ্মীপুর থেকে। এরপর ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শুভর সংগ্রাম শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং এক প্রজন্মের প্রতীক।

নির্বাচনে শুভর অঙ্গীকার

চাকসু নির্বাচনে দাঁড়িয়ে শুভ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তার অবস্থান। তিনি বলেন, 'জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা চোখের আলো হারিয়েছেন, তাদের ত্যাগ ও সংগ্রামকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে ধারণ করতে চাই। সেই আন্দোলনের চেতনা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। আমার প্রধান কাজ হবে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি বন্ধ করা। এ জন্যই আমি কোনো প্যানেলে নেই, এককভাবে লড়ছি।'

শুভর নির্বাচনী অঙ্গীকারও ব্যতিক্রমী। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নির্বাচিত হলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করবেন। যাদের সাধারণত অবহেলা করা হয়, তাদের কণ্ঠস্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তিনি।

পাশাপাশি তার ঘোষণা, 'আমি যত ভোটে নির্বাচিত হব, ততটি গাছ রোপণ করব।'

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

2h ago