জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকব না, কোনোকিছু চাপিয়ে দেবো না: ইব্রাহীম রনি

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী (২০১৭-১৮ সেশন) মো. ইব্রাহীম হোসেন রনি আসন্ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত 'সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট' প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করছেন।
জয়ী হলে তিনি জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকবেন না এবং কারও ওপর কোনোকিছু চাপিয়ে দেবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন।
দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হবেন না, সবাই সবাইকে কথা বলার সুযোগ দেবে—এমন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হলে আমার মনে হয় শিক্ষার্থীরা সেই ছাত্ররাজনীতিকে গ্রহণ করবে। আমি বলতে চাই, যদি নির্বাচিত হই তাহলে আমার কার্যক্রম নিয়ে সবাই কথা বলতে পারবেন, আমি জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকব না।'
'বিগত শাসনামলে আমরা ভোট দিতে পারিনি। আমরা জীবনের প্রথম ভোটটা এই ছাত্র সংসদ নির্বাচনেই দিচ্ছি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা সহিংসতার দোহাই দিয়ে চাকসু নির্বাচন দীর্ঘ সময় বন্ধ রাখা হয়েছে। এখান থেকে বের হয়ে আসা দরকার। প্রতিবছর নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া জরুরি,' বলেন রনি।
ছাত্রশিবিরের এই নেতা আরও বলেন, 'নির্বাচিত হলে সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে নয়, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করব। সংসদের দায়িত্ব পালন করাই হবে আমার কাজ, সংগঠনের পারপাস সার্ভ করা সংসদের কাজ নয়।'
জয়ী হলে কী করবেন জানতে চাইলে ভিপি প্রার্থী রনি বলেন, 'নিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরি করব। এজন্য প্রক্টরসহ প্রশাসনিক দায়িত্বশীলদের টহল বৃদ্ধি করতে হবে, সিসিটিভি ক্যামেরা, লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিরাপত্তা প্রহরী বাড়াতে হবে।'
'আবাসন সংকট নিরসনে বহুতল ভবন নির্মাণে প্রশাসনকে চাপ দেবো, হলের এক্সটেনশন নির্মাণ করতে বলব। এছাড়া সেশনজট কমানো, চিকিৎসক নিয়োগ ও চিকিৎসাকেন্দ্রের উন্নয়ন, অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বাড়ানো, যাতায়াত সমস্যা সমাধানে শাটল ট্রেনের বগি বাড়ানোর কাজ করব,' যোগ করেন তিনি।
নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'আরও দুই ক্যাম্পাসে ইতোমধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের পর অনেক কথা শুনেছি। এর কতটুকু সত্যতা, কতটুকু প্রোপাগান্ডা—জানি না। জাকসু নির্বাচনের ৪০ ঘণ্টা পর রেজাল্ট দিয়েছে। এগুলো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটা প্রহসন। আমরা চাকসু নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, তারা যেন ওই দুই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন আয়োজন করেন।'
তিনি বলেন, 'প্রতিটি ক্যাম্পাসের পরিবেশ-পরিস্থিতি ভিন্ন। চাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের প্যানেল বিজয়ী হয়ে যাবে, আমি এটা মনে করি না। আমি মনে করি শিক্ষার্থীরা যাদের যোগ্য মনে করবে, যাদের ওপর আস্থা রাখতে পারে, তাদেরই ভোট দেবে।'
কেন প্রার্থী হলেন জানতে চাইলে রনি বলেন, 'প্যানেল তৈরিতে কেন্দ্রীয় সভাপতি নিজ দায়িত্বে সবার সঙ্গে কথা বলে সার্ভে করে গ্রহণযোগ্যতা দেখে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রশিবিরের দায়িত্বে ছিলাম। মনোনয়ন পাওয়ার পর সেখানকার দায়িত্ব ছেড়ে নির্বাচনের কাজ শুরু করেছি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সামনের সারির দায়িত্বশীল হিসেবে আমাকে সবাই চেনে। ২০২৪ সালের ১৯-২০ জুলাই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। ৫ আগস্ট আমার দায়িত্ব ছিল হাটহাজারীতে। দুপুরে সেখান থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে এসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একত্র করে হল পাহারা দিয়েছি। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমি এই পর্যায়ে এসেছি।'
প্যানেলের অন্যান্য প্রার্থীদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের প্যানেলের প্রায় অর্ধেক প্রার্থী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এর মধ্যে ৫ জন নারী শিক্ষার্থী আছেন, একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী আছেন, একজন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড আছেন, বিভিন্ন ক্লাবের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থী আছেন। আমি মনে করি আমাদের সব প্রার্থী নিজ নিজ জায়গায় সেরা।'
তার মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রমগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। 'আমি মনে করি সারাদেশেই জেনারেশনাল একটা পরিবর্তন হচ্ছে, চিন্তার পরিবর্তন হচ্ছে। সে জায়গা থেকে ছাত্রশিবিরও এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের চাওয়ার ওপর। আমরা কোনো ধরনের চাপিয়ে দেওয়ার রাজনীতি করব না,' বলেন রনি।
তিনি আরও বলেন, 'বিগত বছরগুলোতে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রশিবিরের কর্মকাণ্ড ছিল না এমন নয়। আমরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করেছি। হয়ত সাংগঠনিক পরিচয় দিতে পারিনি, কিন্তু শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।'
এই প্রার্থী বলেন, 'আগে ছাত্রশিবিরের একজন হিসেবে হয়ত দাঁড়াতে পারিনি, কিন্তু ৫ আগস্টের পর তারা যখন আমার সাংগঠনিক পরিচয় জানল, আমি মনে করি আমার প্রতি শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা আরও বেড়েছে।'
সবশেষে তিনি বলেন, 'চাকসু নির্বাচনে যেই বিজয়ী হোক না কেন, আমরা জয়ী হলে সবাইকে নিয়ে কাজ করব।'
Comments