ডাকসু নির্বাচন: উল্লেখযোগ্য বেশি ভোট পড়েছে এবার

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ক্যাম্পাসে স্বমহিমায় ফিরে এসেছে। শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি যেন গণতান্ত্রিক নবজাগরণ।

মঙ্গলবার রাতে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসাররা জানিয়েছেন, মোট ভোট পড়েছে প্রায় ৭৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, যা আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেশি।

সর্বোচ্চ কাস্টিং ভোট রেকর্ড হয়েছে সূর্য সেন হলে, ৮৮ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমান হল, সেখানে ভোট পড়েছে ৮৭ শতাংশ এবং কবি জসিমউদ্দিন হলে ৮৬ শতাংশ।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ৬৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ ভোট রেকর্ড হয়েছে। সবচেয়ে কম পড়েছে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে, ৬৭ দশমিক ০৮ শতাংশ।

ভোর থেকেই শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ভোটকেন্দ্রগুলোর সামনে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। যারা প্রথমবার ভোট দিলেন, দিনটি তাদের জন্য ছিল নাগরিক অংশগ্রহণের একটি পরিণত ধাপ।

প্রাক্তণ প্রার্থী এবং ছাত্ররাজনীতি যারা পর্যবেক্ষণ করেন, তাদের মতে ১৯৭৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নির্বাচনগুলোর চেয়ে এবারের ডাকসু নির্বাচনে ভোটদানের হার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেশি ছিল।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি এবং ১৯৭৯-৮০ সালের ডাকসু নির্বাচনে দুবার নির্বাচিত সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না অনুমান করেন, তার সময়ে ভোটদানের হার ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ।

১৯৮২ সালের নির্বাচনে বামপন্থী-সমর্থিত প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে পরাজিত হয়েছিলেন অধ্যাপক এম এম আকাশ। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, সে সময় ভোটারদের অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মোশতাক হুসাইন ১৯৮৯ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ১৯৯০ সালে ভিপি প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি জানান, উভয় নির্বাচনে ভোটদানের হার প্রায় ৬০ শতাংশ ছিল।

ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে বেশ কটি বইয়ের রচয়িতা মোহাম্মদ হান্নান দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণকে অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক বলে বর্ণনা করেন। তার মতে, একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস যে শিক্ষার্থীদের পছন্দ, এটা তারই প্রতিফলন।

স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে জুলাই বিপ্লবের মাত্র এক বছর পর—অনেকে ভোট দিতে আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছে। তিনি আরও মনে করেন, গণঅভ্যুত্থানে নারীদের অসামান্য ভূমিকা ছিল, যা ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

১৯৭২ সালে, মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পরেই অনুষ্ঠিত প্রথম ডাকসু নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ বিশেষভাবে বেশি ছিল, বলেন হান্নান। যদিও তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক সংখ্যাটি মনে করতে পারেননি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাত্র এক বছর পর ডাকসু ১৯২২ সালে গঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল সাংস্কৃতিক কার্যক্রম প্রচার এবং হলগুলোর মধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এটি দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ঐতিহাসিকভাবে প্রভাবশালী ছাত্র সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে ওঠে। যাকে প্রায়ই ভবিষ্যতের জাতীয় নেতাদের জন্য একটি সূতিকাগার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৫ সদস্যের সিনেটে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি উপাচার্য নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যিনি (উপাচার্য) পদাধিকারবলে ডাকসুর সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী প্রক্রিয়াও পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৭২ সালের আগে, ডাকসু নেতারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হতেন—প্রথমে হল ইউনিয়ন নির্বাচনের মাধ্যমে; পর্যায়ক্রমে হলগুলোতে ভিপি এবং জিএস পদগুলো নির্বাচিত হতো। মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পরেই অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালের নির্বাচনে সরাসরি ভোটদান শুরু হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Shibir-backed candidates Shadik, Farhad leading in top two Ducsu posts

Counting going on till 6:00am; turnout 78% in polls marked by festivities

4h ago